Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 1:54 am

মুনাফার আশায় পরিবেশের ক্ষতি করবে চিলি?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০২০ সালে বিশ্বে প্রায় এক কোটি ইলেকট্রিক যান রাস্তায় ছিল। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় আট কোটি হবে। ইলেকট্রিক যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। চিলিতে বিশ্বের অন্যতম বড় লিথিয়ামের ভাণ্ডার আছে। কিন্তু লিথিয়াম উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাই চিলির সামনে এখন প্রশ্ন, ই-মোবিলিটির প্রসার বৃদ্ধি থেকে লাভবান হতে কি লিথিয়াম উৎপাদন বাড়ানো হবে, নাকি পরিবেশ রক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়া হবে। খবর: ডয়চে ভেলে।

চিলির লিথিয়ামের বেশিরভাগই অন্য দেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয়- বিশেষ করে চীনে। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিথিয়াম আমদানিকারক এবং সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারকও। এশিয়ার এই দেশটি পরিশোধন শিল্প এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করছে।

বিশ্বের মোট লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ৭৯ শতাংশ উৎপাদন করে চীন। এরপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড।

চিলির নিজস্ব উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা কতটা বাস্তবসম্মত, বিশেষ করে যখন তাকে চীনের সিএটিএল কোম্পানির মতো বড় উৎপাদনকারকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে? ব্যাটারি ও সাপ্লাই চেন বিশেষজ্ঞ ক্রিস বেরি বলছেন, ‘‘তাত্ত্বিকভাবে বললে, চিলিতে আপনি সাপ্লাই চেন গড়ে তুলতেই পারেন। ক্যাথোড, অ্যানোড ও ব্যাটারি উৎপাদন করতে পারেন। এমনকি ইলেকট্রিক যানও তৈরি করতে পারেন। কিন্তু ইলেক্ট্রিক যানের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইইউ ও চীন, এবং তারাও তাদের নিজস্ব সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলছে, তাদের সেই ক্ষমতা আছে। ফলে চিলিকে তার উৎপাদিত পণ্য ঐসব বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাই আমার মনে হয়, নিজস্ব সাপ্লাই চেন গড়ে তোলার বিষয়টা সফল হবে না।”

তাহলে কি চিলি বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোতে শুধু কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবে থেকে যাবে, যারা এখন তাদের জলবায়ু লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে চাইছে? যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ।

চিলির ইউডিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলডো মাডারিয়াগা বলেন, ‘‘ডিকার্বনাইজেশন বিষয়ে বিশ্বে একটি বিভাজক রেখা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ গ্লোবাল নর্থ তাদের উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে ডিকার্বনাইজ করার জন্য গ্লোবাল সাউথকে সম্পদ আহরণে আরও বেশি চেষ্টা করতে বলছে। আর গ্লোবাল সাউথ বলছে, ঠিক আছে, এটা আমার জন্য ভালো, কারণ তাহলে আমি আরও বিনিয়োগ পেতে পারি। কর্মসংস্থান বাড়াতে পারি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আরও বাড়াতে পারি।”

মুনাফা, না পরিবেশ?
লিথিয়াম উৎপাদনকে আরও কয়েকটি নতুন অঞ্চলে প্রসারিত করতে চায় চিলি। ফলে পরিবেশ রক্ষায় সহায়তার জন্যও আরও কিছু করতে চায় দেশটি। এখন পর্যন্ত সালার ডে আটাকামা এলাকায় লিথিয়াম উত্তোলনের কাজ বেশি হয়েছে। সেখানেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লিথিয়াম রয়েছে।

সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ ব্রাইন থেকে পণ্য নিষ্কাশনে তুলনামূলকভাবে কম সিওটু নির্গত হয়। তবে এতে প্রচুর পানি খরচ হয়। তাই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। জলাভূমিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ইকোসিস্টেম ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভূমি ও সামুদ্রিক অঞ্চল রক্ষার অঙ্গীকার করেছে চিলি। লিথিয়াম উত্তোলনের নতুন প্রক্রিয়াও খুঁজছে। লিথিয়াম বিশেষজ্ঞ জাইমে আলে বলেন, ‘‘আরও আধুনিক পদ্ধতির সন্ধান করা হচ্ছে। যেমন পানির ব্যবহার কমাতে সরাসরি লিথিয়াম উত্তোলন করা এবং খননকাজে স্থানীয়দের আরও বেশি করে যুক্ত করা, যেন তারাও লাভের ভাগ আরও বেশি পেতে পারে। যেমন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের।”

সমস্যা হলো, নতুন কৌশলগুলো এখনও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। কখন সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী হবে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার: ই- মোবিলিটির প্রসার বাড়ছে, এবং চিলি এ থেকে আরও লাভের আশা করছে। কিন্তু চিলির অগ্রাধিকার কী হবে, তা স্পষ্ট নয় -রাষ্ট্রীয় মুনাফা বাড়ানো নাকি পরিবেশ রক্ষা করা। নাকি দুইয়ের মধ্যে একটি ভালো ভারসাম্য খুঁজতে সমর্থ হবে সরকার।