মুনাফার ধারা অব্যাহত রেখেছে সোনালী পেপার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগের বছরের একইসময়ের মতো চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বা প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’ ২৪) মুনাফার ধারা অব্যাহত রেখেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং খাতের কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিক মিলে কোম্পানিটি ৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল ১৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি আয় বেড়েছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ বা ৪৬ শতাংশ এবং মুনাফা বেড়েছে সাত কোটি ৬৮ লাখ বা ৪৩ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে কেবল দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ২৪) কোম্পানিটি ২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে।

কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বা প্রথম দুই প্রান্তিক মিলে (জুলাই-ডিসেম্বর’২৪) কোম্পানিটি ৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ৪৮ পয়সা। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল ১৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এতে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়ায় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ এই সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ বা ৪৬ শতাংশ এবং মুনাফা বেড়েছে সাত কোটি ৬৮ লাখ বা ৪৩ শতাংশ।

অন্যদিকে শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ২৪) ২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। এতে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৭২ পয়সা। আগের বছরের একই ৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী লোকসান করেছে ৫৬ লাখ টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১৭ পয়সা। এতে আয় বেড়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১২৩ শতাংশ এবং মুনাফা বেড়েছে ২২৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৬৬ টাকা ২১ পয়সা। এছাড়া প্রথম দুই প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ১০ টাকা ৯৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ টাকা ১৭ পয়সা।

সোনালী পেপারের কোম্পানি সচিব রাশেদুল হোসাইন বলেন, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানি মূল ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রান্তিকে বিক্রয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া কোম্পানির ফাইন্যান্স কস্ট হ্রাস পেয়েছে; যার ফলে নিট মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৭৯ পয়সা, আর ২০২৪ সালের ৩০ জুন তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এছাড়া আলোচিত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ হয়েছে ১০ টাকা ৩৯ পয়সা।

বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির ৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৫০৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কোম্পানির ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৮ শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৭৪ পয়সা। ২০২৩ সালের ৩০ জুনে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬৪ টাকা ৯৪ পয়সা। আর আলোচিত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ৭ টাকা ৪৭ পয়সা। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ২ পয়সা, আর ৩০ জুন ২০২২ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৪১ টাকা ৩০ পয়সা। আর আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ঘাটতি হয়েছে ১০ পয়সা। ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের প্রথম বেসরকারি কাগজ উৎপাদনকারী কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। ১৯৭৭ সালে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি। তবে তৎকালীন মালিকদের পরিচালন ব্যর্থতায় ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে ইউনুস গ্রুপের হাত ধরে কোম্পানিটি পুনঃউৎপাদন কার্যক্রম চালু করে। নারায়ণগঞ্জের তারাবোতে কোম্পানিটির কারখানায় দুটি উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩৫ হাজার টন।