Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 6:43 pm

মুনাফা সংগ্রহের চাপে সপ্তাহ শেষে লোকসানে বিনিয়োগকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার সূচকের পতনের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ সূচক বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহে পতন হলো পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচক কমলেও গড় লেনদেন বেড়েছে সাত শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। দুই সপ্তাহ বিনিয়োগের পর বিনিয়োগকারীদের মুনাফা সংগ্রহের চাপে এ পতন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় চলছে। সেই সঙ্গে হিসাববছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণাও করছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। ফলে আগের দুই সপ্তাহে কোম্পানির ব্যবসা দেখে এর শেয়ার থেকে কম সময়ে ভালো মুনাফার আশায় অনেকে বিনিয়োগ করছেন। এতে আলোচ্য সপ্তাহগুলোয় সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগের ফলে বেশ কয়েকটি শেয়ারে মুনাফায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। পরে তৃতীয় সপ্তাহে এসে সেই মুনাফা সংগ্রহ শুরু করেন অনেকে। তাই এ মুনাফা তুলতেই বিক্রির চাপ বেড়েছে। এতে সপ্তাহ শেষে অনেকের লোকসান হয়েছে বলে জানান তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা সিমেন্ট খাতে উত্থান হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর সব চেয়ে বেশি বেড়েছে। বিপরীতে গত সপ্তাহে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর বেশি কমেছে। এদিকে দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার। এছাড়া গত সপ্তাহে টেলিকমিউনিকেশন, প্রকৌশলী ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারদর কমা বা বৃদ্ধির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮০২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭৪৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৫৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৪০৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় দুই হাজার ৯৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৫৯০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। চলতি সপ্তাহে মাত্র তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ বাড়ার পর ডিএসইর প্রধান সূচক কমল।

প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা এক শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৯টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির। ২৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা দুই সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধির পর মুনাফা সংগ্রহে পুঁজিবাজারের সূচক পতনে শেষ হয়েছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থার মধ্যে পর্যালোচনা করেছে। সেই ভিত্তিতে তারা পোর্টফোলিকে আবার সাজিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি কিছু মুনাফা সংগ্রহ করেছে। সদ্য শেষ হওয়া তিন মাসের আয়ের প্রতিবেদন বাজারে আসতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, যেগুলোর আয় তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। আবার যে শেয়ারের আয় প্রত্যাশার থেকে কম ছিল, সেই শেয়ার বিক্রি করেছে।

এছাড়া কিছু বিনিয়োগকারী দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে বিনিয়োগ না করে পর্যবেক্ষণ করছেন। পোর্টফোলিও আবার সাজানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সময়ে মুনাফা সংগ্রহের প্রবণতা বাজারে বিক্রি চাপ বৃদ্ধি করে। ফলে সপ্তাহ শেষে লোকসানের সম্মুখীন হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা সিমেন্ট খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে এক শতাংশ। শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ার। এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে ভ্রমণ খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতে গত সপ্তাহে ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ভ্রমণ ও অবকাশ খাত।