মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় শিপইয়ার্ড থেকে গায়েব সাত কোটি টাকার জাহাজ

প্রতিনিধি,  মুন্সীগঞ্জ: এ যেন কোনো সিনেমার কাহিনি। যেমন তেমন কোনো ঘটনা নয়, শিপইয়ার্ড থেকে রীতিমতো ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৭০০ টন ওজনের আস্ত এক জাহাজ গায়েব হয়ে গেছে রাতের আঁধারে।

জাহাজ মালিক পক্ষ বলছে, মেরামত ও ইয়ার্ড ব্যবহার বাবদ পাওনা টাকা না দেয়ায় ক্ষোভে কেটে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে জাহাজ। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে রাতের আঁধারে জাহাজ নিয়ে গেছে মালিকপক্ষ।

এ কাণ্ডটি ঘটেছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় শিপইয়ার্ড থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনে। এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও দায়ের করেছে দুপক্ষ। থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না জাহাজটির।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর গ্রামের মেঘনার তীরের থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড থেকে গায়েব হয়ে গেছে মেরামত করতে দেয়া সাত কোটি টাকা দামের একটি জাহাজ। এতে ওই শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জাহাজটি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।  এ ঘটনায় গত ৩০ মে গজারিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন।

লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, তিনি ঢাকার বনানীতে বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোত্তাকিন সালামের ব্যক্তিগত সহকারী। ২০২৩ সালের ২৩ মে বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের মালিকাধীন টেকনাফ নামক অয়েল ট্যাংকার জাহাজটি মেরামতের জন্য থ্রি অ্যাঙ্গেল শিপ ইয়ার্ডে নিয়ে যান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. আবুল রশিদ ও মো. থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আমিনুল ইসলাম, পরিচালক এমএ রহমান আনসার, পরিচালক শেখ মাহমুদ হাসান, জিএম অপারেশন মোজাম্মেল হক, ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন, হিসাবরক্ষক হুমায়ন কবির ও ফোরম্যান আলামিন। ফোরম্যান তাদের ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর ও ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি তাদের  প্রতিষ্ঠানের স্টাফ রবিউল হক ওরফে রফিকের মাধ্যমে মেরামতের বিল পাঠান।

পরে তারা মেরামতের বিল পেয়ে বিল পরিশোধ করে জাহাজটি নিয়ে আসার জন্য তাদের  প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় কুমার সাহা এবং ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেকুজ্জামান রায়হানকে চলতি বছরের ২৯ মে থ্রি অ্যাঙ্গেল শিপ ইয়ার্ডে পাঠান। তারা শিপ ইয়ার্ডে গিয়ে জাহাজ দেখতে না পেয়ে শিপ ইয়ার্ড শ্রমিকদের জাহাজের কথা বললে তারা বলেন, জাহাজটি কয়েক দিন আগে শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে। এ কথা শুনে তাদের কর্মকর্তারা শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান জাহাজের কথা।

মেঘনা নদীতীরে গড়ে ওঠা থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের যে স্থানটিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান ছিল জাহাজটির, তার আশপাশে অসংখ্য জাহাজ দেখা গেলেও অস্তিত্ব নেই ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্যরে টি টেকনাফ অয়েল ট্যাংকারের।

বিষয়টি সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. একেএম মতিউর রহমানের টেলিফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গজারিয়া থানার ওসি রাজিব খান জানান, জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব। তবে যত দ্রুত সম্ভার আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

প্রসঙ্গত, জাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা শিপবিল্ডিংয়ের তথ্য বলছে, ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট জাহাজটি নির্মাণ করা হয় ১৯৪৪ সালে। সেখানে জাহাজটির বর্তমান অবস্থা পরিত্যক্ত অথবা হারিয়ে যাওয়া দেখানো হয়েছে। তবে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের তালিকায় জাহাজটির নির্মাণ সাল ১৯৪৫ দেখানো হয়েছে।