কেজিতে উৎপাদন খরচ ১৮ টাকা
বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা কেজি দরে
শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: আলু উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে এবারও আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও কৃষকের মুখে স্বস্তির হাসি নেই, রয়েছে দুশ্চিন্তার ছাপ। ঘাম ঝড়িয়ে চাষ করা আলুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
বর্তমানে উঁচু জমি থেকে আলু উত্তোলনের পর কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ ১৮ টাকা পড়লেও ৫ টাকা লোকসানে বাজারে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তার ওপর হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তোলন করা আলুর ন্যায্য মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকের।
কৃষকের দাবি, সস্তায় আলু কিনে এবার মধ্যস্বত্বভোগীরা হিমাগার ভিত্তিক সিন্ডিকেট করে ফায়দা লুটার পরিকল্পনা করেছে।
খোঁজ নিয়ে ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমানে জমি থেকে আলু তোলা শুরু হয়েছে। তবে কৃষক আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখতে পারছে না। বাধ্য হয়ে পানির দামে বাজারে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ১২ থেকে সাড়ে ১৩ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি হচ্ছে আলু।
কৃষকরা জানিয়েছে, বর্তমানে উঁচু জমিতে আলু উত্তোলন শুরু হলেও আগামী এক সপ্তাহ পর এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলায় পুরোদমে আলু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে কৃষককূল আলু তোলার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের মুখে স্বস্তির হাসি নেই, চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়েই আলু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কৃষকের দাবি, উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজিতে ১৮ টাকা। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩ টাকায়। তাই মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে তারা। এই লোকসান থেকে বাঁচতে আলু সাধারণত হিমাগারে রাখেন কৃষক। কিন্তু এবার হিমাগার ভাড়া কেজিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে হিমাগার সমিতি। গত বছরও ৫০ কেজির প্রতি বস্তার ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০। এবার তা ৪০০ টাকা ঘোষণা করেছে হিমাগার সমিতি। বাড়তি ভাড়া এখন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাড়িয়েছে। এতে ক্ষুদ্ধ কৃষক। এ অবস্থায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হিমাগার চালুর দাবি তাদের।
কৃষকরা বলছেন, ‘আগে হিমাগারের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা। আলু ১০-১২ টাকা কেজি। কৃষক কয় টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে, সরকার তা নির্ধারণ করে দিলো না কেনো। কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বেশি হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভাড়া রিভাইস করার আহ্বান জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্থ করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমাগার সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজি প্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও মুন্সীগঞ্জে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের মুক্তারপুরের মালিক দুলাল ম্লল বলেন, ‘আগে যা ভাড়া রাখতাম তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। এ কারণে এই মৌসুমে ভাড়াটা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
মুন্সীগঞ্জের জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম, ‘ হিমাগারের ভাড়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে। তারাও তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, তারা চেষ্টা করবেন। মুন্সীগঞ্জে সচল ৫৮ হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। আর এবার জেলায় আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন।