মুন্সীগঞ্জে সংরক্ষণ করা আলুতে পচন, দিশেহারা কৃষক

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করতে না পেরে এ বছর বাড়িতে গোলা বানিয়ে আলু সংরক্ষণ করেছেন অনেক কৃষক। এছাড়া পর্যাপ্ত গোলার অভাবে উঁচু জমি, বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায়ও আলু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তারা। এ বছর আলু উত্তোলন মৌসুমে আলুর দাম কম থাকায় বাড়িতে ও জমিতে আলু সংরক্ষণ করে কৃষক বাড়তি দামের আশায়। তবে এসব আলুতে পচন ধরায় এখন কৃষকের মাথায় হাত। দিশেহারা হয়ে কৃষকরা কম দামে আলু বিক্রি করতে শুরু করেছেন। জেলার প্রায় সব উপজেলায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় এসব দৃশ্য বেশি দেখা যায়। কিন্তু আলু উত্তোলনের পরে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কাক্সিক্ষত দাম না বাড়ায় বাড়িতে আলু সংরক্ষণের সময়ও বাড়তে থাকে। গত কিছুদিন ধরে আলুর দাম কিছুটা বাড়লে আলু বিক্রি করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। গোলা ভেঙে আলু বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। অধিকাংশ গোলার অর্ধেকেরও বেশি আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

এছাড়া গোলার বাইরে উঁচু জমিতে পরিত্যক্ত ভিটায় যে সমস্ত আলু সংরক্ষণ করেছিলেন তা প্রায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির কারণে। এ যেন কৃষকের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর আলু উত্তোলন মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে বৃষ্টিতে এক দফা বীজ আলু পচে নষ্ট হওয়ার পর পুনরায় আবারও বাড়তি দামে বীজ কিনে আলু রোপণ করেছিল কৃষকরা। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল দ্বিগুণেরও বেশি। তারপরে উত্তোলন মৌসুমেও কয়েক দফা বৃষ্টিতে বাড়তি দামে শ্রমিক দিয়ে আলু উত্তোলন করতে গিয়ে ব্যয় আরও বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩০.৬২ মেট্রিক টন করে আলু পাওয়া গেছে। সে হিসাবে বছর ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৪টি সচল হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে কৃষক জমিতে ও বাড়ির গোলায় এবং পরিত্যক্ত উঁচু ভিটায় সংরক্ষণ করে রেখেছিল।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, আলু উত্তোলন মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আলু মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে পাইকাররা এনে রেখেছেন। যার কারণে তারা বীজ আলু ছাড়া তেমন কোনো আলুই হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেননি। হিমাগারে স্থান না পেয়ে বাড়িতে আলু রেখেছিলেন কৃষক। এখনও তাদের আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক আমির মোল্লা বলেন, এ বছর গোলায় রাখা প্রায় অর্ধেক আলু পচে গেছে। গোলার বাইরে পরিত্যক্ত ভিটায় যে সমস্ত আলু রাখছিল সব পচে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কৃষক বদলির টাকাও পায়নি। এ বছর জমিতে আলু বৃষ্টি পাইছে। তোলার পরে আলু ঘরে নেয়ার পরেই পচন ধরেছে। উত্তরাঞ্চলের আলু এ বছর আমাদের জেলায় প্রচুর আসছে। যার কারণে আমরা হিমাগারে আলু রাখতে পারিনি। কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ লাখ বস্তা আলু উত্তরবঙ্গ থেকে মুন্সীগঞ্জের কোল্ডস্টোরে আনছে। এজন্য আমরা আলু রাখতে পারিনি। কৃষক মানিক মিয়া বলেন, এ বছর একবার আলু লাগাইলাম বৃষ্টিতে তলায় গেল, আবার লাগাইলাম তোলার সময় আবারও বৃষ্টি হইল। গোলায় রাখায় পর আমাদের আলু নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আলু ১৫-১৬ টাকা কেজি বিকাইতেছে। কিন্তু আমাদেরতো আলু নেই, সব পচে আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। আলু উঠানোর পর আমরা ৫ টাকা কেজিও আলু বিক্রি করছি। গোলায় পচার কারণে শ্রমিকের দামও পামু না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, আমাদের দেশের কৃষকরা গোলায় আলু সংরক্ষণের পর গোলায় আলু আর বাছাই করেন না। যার কারণে গোলায় একটি পচা আলু থাকলে তা থেকে দ্রুত অন্যান্য আলুতে পচন ছড়ায়। বৃষ্টিপাতের পরে জমি ভালোভাবে শুকানোর আগে জমি হতে আলু তুললে, ওই আলু ভিজা থাকলে তা বস্তার মধ্যে ভরলে কিংবা ভিজা আলু গোলার মধ্যে রাখলে তা থেকেও দ্রুত আলুতে পচনের সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, এ বছর আলু রোপণ মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর কম জমিতে ৩৫ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৩০ মেট্রিক টনের বেশি করে আলু উৎপাদন হয়েছে।