হামিদুর রহমান : তৈরি পোশাক খাতের সুবাদে দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়লেও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষত উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও অনেক কম। এক্ষেত্রে ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণপ্রাপ্তি বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া সামাজিক ও পারিবারিক বাধাও নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। যদিও পরিবেশ ক্রমেই উন্নত হচ্ছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি দেশের সাতটি বিভাগের ৪৫টি জেলা থেকে এক হাজার ৫১০ জন নারী উদ্যোক্তাদের ওপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে ‘ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস ইন এসএমই: বাংলাদেশ প্রসপ্রেকটিভ ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ নারী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাধার শিকার হচ্ছেন বরিশাল বিভাগের নারীরা। ওই বিভাগের নারীরা উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার হার ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ। তারপরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া সিলেট বিভাগে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও রংপুরে ১০ শতাংশ নারী।
অন্যদিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় ব্যবসায় ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারীদের আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগে। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব রয়েছে বলে জানায় ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ নারী। এছাড়া ব্যবসায় পরিচালনায় দক্ষতার অভাব রয়েছে ১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ নারীর। আর মোট নারী উদ্যোক্তার মধ্যে ১০ শতাংশের কোনো কাজের দক্ষতা নেই।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে আমাদের সমাজের মাইন্ড সেটআপ একটা বড় সমস্যা। এটা পরিবর্তন করতে হবে। মেয়েদের কাজের প্রতি বাধা না দিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এছাড়া উদ্যোক্তা তৈরিতে ঋণ সুবিধা ও গবেষণার বিকল্প নেই। উদ্যোক্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ঋণব্যবস্থা এতটাই সহজ করতে হবে যেন প্রত্যন্ত এলাকার নারীরাও সহজে উঠে আসতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালে গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে ৪২ শতাংশ নারীকে পারিবারিকভাবে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করা হতো। তবে ২০১৭ সালে তা চার শতাংশে নেমে এসেছে।
এদিকে ২০০৯ সালে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ নারীকে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে এটি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী কর দিতেন, যা ২০১৭ সালে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতেন, যা ২০১৭ সালে বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, ব্যবসায় এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে অপ্রয়োজনীয় চাপে রাখা হয় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারীদের। ঋণসুবিধা ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে যেসব নারী ব্যবসা করছেন তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় পণ্য মার্কেটিং বা বাজারজাত করতেও জটিলতার মুখে পড়ড়ে হচ্ছে। এছাড়া পাইকারিভাবে পণ্য ক্রয়েও নারী উদ্যোক্তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রধানতম বাধার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থ সংকট। তাই নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়ম-নীতিতে শিথিলতা আনতে হবে। যদিও ব্যাংকে কিছু কিছু সুবিধার কথা বলা হয়, তবে বাস্তবে উদ্যোক্তারা তা পাচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের জন্য ব্যাংকঋণ সহজীকরণ ও চাহিদা অনুযায়ী ঋণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। কীভাবে ব্যবসা করতে হয় সে বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে। কম্পিউটার ও কার্যকর বিজনেস ইংলিশ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে।’