Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 7:54 am

মূল্যস্ফীতি কমানোর বাস্তবানুগ উদ্যোগ নিন

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে বাংলাদেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) সর্বশেষ তথ্যে এমনই বলেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ভারত ও নেপালসহ নানা দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।

বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে প্রায়ই দ্বিমত পোষণ করেন বিশ্লেষকরা। কেননা সংস্থাটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি তথ্য-উপাত্তকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি আরও বেশি হতে পারে। ভিন্নমত থাকলেও একটি বিষয়ে সবাই একাত্ম হবেন, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ বড়ই বিপাকে আছে। তাই বিতর্কে না গিয়ে কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমানো যায়, সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে। 

কোন দ্রব্য মূল্যস্ফীতি  বাড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো একক পণ্যের নাম বলা যাবে না। কেননা বেশিরভাগ পণ্যের দাম ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে। আগে কখনও পেঁয়াজ, কখনও জ্বালানি, কখনও নিতপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রভাবক। এখন প্রতিটি পণ্যের দামই চড়া। তাই বলা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সুষ্ঠুভাবে করা গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে।  

সরকারের উচিত কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সেটি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা বড় সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। দাম বেশি হলেও সেটি নিয়ন্ত্রণে আছেÑএমন বক্তব্যে অসাধু ব্যবসায়ীরাই প্রশ্রয় পায়। টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য বিক্রি করলে গেলে মজুতকৃত পণ্য বাজারে ছাড়তে বাধ্য হবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মজুতবিরোধী অভিযানে শাস্তি হলে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করতে পারে সরকার।

বৈশ্বিক মহামারি কভিডের পর বিশ্ব নানা সমস্যায় পতিত। পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহেও সংকট চলছে। ফলে অপ্রত্যাশিত হলেও এটিই স্বাভাবিক প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলোÑএ বিশ্ববাজারের প্রভাবে আমাদের দেশে পণ্যের দাম যতটা বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারণে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে, আমদানি পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বাড়ালে আমাদের এখানেও বাড়বে কিন্তু চাল, মাছ, মাংস ও সবজির মতো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ কী? এগুলোর জন্য তো আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয় না।

সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রান্তিক ও নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ঠেকাতে বিবিএসের পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির বাস্তব চিত্র তুলে আনতে হবে এবং পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সরবরাহ ও মজুত তথ্যে যেন গরমিল না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে। ফাঁকফোকর গরমিল থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।  বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয়, মুনাফার অর্থ এবং আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে খারাপ সময়েও মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি।