মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন জরুরি

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বিআইডিএসের সেমিনারে বক্তারা: সঠিক নীতির অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাধারণত বিভিন্ন দেশ যে ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, বাংলাদেশ সে ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো তেমন কার্যকর হয়নি।

প্রতিবেদনে একজন অর্থনীতিবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সারা পৃথিবী যেখানে সুদের হার বাড়িয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সুদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে বেঁধে রেখেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য মতে, সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর জন্য আদমানি হ্রাস করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কাজেই কোনো একটি নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তার অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক।

প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ঢালাওভাবে কভিড-১৯ ভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু এ দুটি সংকট কেবল বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং এটি সারাবিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য। এই দুই বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সফলতা দেখালেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এই পিছিয়ে থাকার পেছনে মূলত সরকারের নীতিগত দুর্বলতা দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ বাড়ানোর কথা বারবার উল্লেখ করেছে। সরবরাহ বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় আমদানি বাড়ানো। কিন্তু রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে গিয়ে সরকার আমদানির ওপর ব্যাপক হারে নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিয়েছে। এতে করে সরবরাহ ব্যবস্থা সংকুচিত হয়েছে। একই সঙ্গে সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে ব্যক্তি খাতে ভোগও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। কারণ প্রবৃদ্ধির প্রধান উপাদানই হচ্ছে ভোগ। অন্যদিকে সরকার চাহিদা কমানোর কথা বললেও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে চাহিদা হ্রাস করার তেমন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চাহিদা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে সরকার কর্মচারীদের বিদেশ সফরের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। আর কিছু বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে চাহিদা খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ যে প্রক্রিয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, বাংলাদেশেরও সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ব্যাংকঋণের সুদের নীতি ঠিক করতে হবে। কারণ যে উদ্দেশে ব্যবসায়ীদের ৯ শতাংশে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি। একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় থাকলেই বরং অর্থনীতিতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অতীতে এমন উদাহরণ রয়েছে। কাজেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।