Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 2:04 am

মূল্য শৃঙ্খলে অংশগ্রহণ বাড়াতে উদ্যোগ নিন

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদন: বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল ও পণ্য বহুমুখীকরণে অগ্রগতি নেই’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাংলাদেশ যেসব চূড়ান্ত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, সেগুলোয় দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যসংযোজন খুবই কম। একই ধরনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের দেশ ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

বিশ্বের যেসব দেশকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জনে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এখানে ব্যবসা সহজীকরণের উদ্যোগ খুব বেশি সফল হয়নি। এর অন্যতম কারণ ব্যবসা করার জন্য যেসব অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, সেগুলো সহজীকরণ না করা। কিছু কিছু সেবা অটোমেশন করা হলেও সেখানে দক্ষতার ঘাটতি বিদ্যমান। তেমই একটি প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি)। একটি ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করার জন্য এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনের জন্য ধাপে ধাপে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় সেবা প্রত্যাশীদের। আরজেএসসিতে কোন কোম্পানির নামের ছাড়পত্র অনলাইনে নেয়া যায়। কিন্তু এর পরের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে ধরনা দিতে হয়। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা সেবাপ্রত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যত বেশি, সেই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন পেতে তত বেশি ‘ঘুষ’ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এত গেল একটি কার্যালয়ের কথা। বিদেশি উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কথা ছিল যে সেখানে ওয়ানস্টপ সেবা চালু হবে। যেখান থেকে বিদেশি উদ্যোক্তারা সব ধরনের অনুমোদনমূলক সেবা এক স্থান থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হয়নি। ফলে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এখনও অনেক কম। এ ছাড়া প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে পিছিয়ে থাকার জন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে, পণ্যের বহুমুখীকরণ না হওয়া। বাংলাদেশ বিগত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রপ্তানি বাজারে বহুলাংশে বস্ত্র ও পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। এত নির্ভরশীলতা থাকা সত্ত্বেও এ খাতটিতেও অভ্যন্তরীণ বহুমুখীকরণ নিশ্চিত হয়নি। ফলে এটি বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছে না। এসব বিষয় সমাধানে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, আগামী দিনে বাংলাদেশ যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে, তাদের সবাই প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে। কাজেই তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে সেই রকম সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সজাগ হবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।