শেয়ার বিজ ডেস্ক: পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এলো সিগন্যালের ত্রুটি। দেশটির রেল কর্তৃপক্ষের করা একটি যৌথ পরিদর্শন প্রতিবেদন এ দাবি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ওই যৌথ প্রতিবেদনে সিগন্যালের ত্রুটির কথা বলছেন রেল কর্মকর্তারা।
তবে এটি প্রাথমিক প্রতিবেদন বলে জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার। বিস্তারিত তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১৭টি বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। এই ট্রেন কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য এই ট্রেনে চেন্নাই যাচ্ছিলেন।
ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত মানুষদের মধ্যে এখনও কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের নাম পাওয়া যায়নি। সরকারিভাবেও এখনও কোনো তথ্য কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের হাতে আসেনি। তবে দু’জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন উপহাইকমিশনের মুখপাত্র রঞ্জন সেন। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহীর রাসেলুজ্জামান ও বগুড়ার হাবিবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘হটলাইন সচল রয়েছে। রাসেলের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি হটলাইনে জানিয়েছেন, রাসেল এখন উড়িষ্যার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাবিবুর রহমানের নাম পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস নবান্নের তালিকা থেকে।’
রঞ্জন সেন বলেন, ‘উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে এখনও আহত দুই ব্যক্তির বিষয়টি যাচাই করা যায়নি। ইতোমধ্যে উপহাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল উড়িষ্যার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা গেলে বাংলাদেশি কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, সেটা বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরেকটি সূত্রের খবর, ওই ট্রেনের এক বাংলাদেশি যাত্রী ঘটনাস্থল থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, তার বগিতে সাত থেকে আটজন বাংলাদেশি ছিলেন। তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন।
উপহাইকমিশনের মুখপাত্র বলেন, কর্মকর্তাদের উড়িষ্যায় পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছেÑকারণ রাস্তায় অনেক গাড়ি আটকে রয়েছে। কলকাতা থেকে উড়িষ্যা হয়ে দক্ষিণ ভারতগামী অসংখ্য ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়ে গেছে বা অন্য রুটে চালানো হচ্ছে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে জানিয়েছে।
হটলাইন নম্বরটি (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) জানিয়ে কলকাতার উপহাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সাধারণ বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ওই ট্রেনটিতে যাতায়াত করেন। তাই দুর্ঘটনার পর ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ ও উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, উপহাইকমিশন যে হটলাইন নম্বর দিয়েছে, তাতে ফোন করে অনেক সময় লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে রঞ্জন সেন বলেন, ‘ঘণ্টায় ৫০টির বেশি ফোন আসছে। সাধারণ লাইন ও হোয়াটসঅ্যাপÑদুইভাবেই ফোন করা যাচ্ছে। সাধারণ নম্বর চলতে থাকলে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ঢুকতে পারে না বা হোয়াটসঅ্যাপে একটি কল চলতে থাকলে অন্য কলটি ঢোকে না। এ কারণে হয়তো অনেক সময় ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না। লাইন সব সময় ব্যস্ত থাকছে।’
এদিকে রেল কর্তৃপক্ষের যৌথ পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আপ মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে (বাড়তি লাইন)। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। এর সঙ্গে সংঘর্ষে করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালাসোরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।’
কিন্তু মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমন্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেয়ায় কোনো গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই তিনটি ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ৮০০-এর বেশি। উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি রেল সূত্রের। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। আহতদের দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবকে এককালীন ১০ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের ২ লাখ টাকা এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
করমন্ডল এক্সপ্রেসটি ছিল ২৩ কামরার ট্রেন। তার অন্তত ১৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার আঘাত এতটাই ছিল যে, মালগাড়ির ওপরে উঠে পড়ে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। একাধিক কামরা দুমড়েমুচড়ে যায়। ট্রেনের বগি সরিয়ে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রেললাইন সরিয়ে আবার কবে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। দক্ষিণ ভারতগামী অনেক ট্রেন এ দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করতে হয়েছে।
ঘটনাস্থলে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বালাসোরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। গতকাল সকাল থেকে সেখানে রয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।