মেগা প্রকল্পে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

 . কে আব্দুল মোমেন: বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজের সক্ষমতা ও যোগ্যতার জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ। একে একে বাস্তবায়ন করছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সব প্রকল্প। এমন সব প্রকল্প, যা কখনও এদেশের মানুষের দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। মানুষ কখনও ভাবেনি যে, এদেশে রাজধানী ঢাকার বুক চিরে মেট্রোরেল চলবে, প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন সেতু, নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হবে টানেল। কিন্তু এর সবই আজ বাস্তব। সব সংকট ও সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার ওপর ভর করে একের পর এক মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। কিছু প্রকল্প উদ্বোধন শুরু হওয়ায় এরই মধ্যে সুফল পাওয়া শুরু করেছে সারাদেশের মানুষ। এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল। পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ কোনো প্রতিবন্ধকতা ও কালক্ষেপণ ছাড়া মাত্র কয়েক মিনিটে পার হচ্ছে পদ্মা নদী, যা পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে আগে দু-এক দিন লেগে যেত! ঢাকার বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রীরা আসা-যাওয়া করছে দ্রুতগামী এ বাহনে চড়ে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। অক্টোবরে বাণিজ্যিক পরিবহন শুরু হয়েছে এ অংশেও। শুধু পদ্মা সেতু আর মেট্রোরেল নয়, দ্রুত কাজ শেষ করে উদ্বোধনের পাইপলাইনে আছে কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রকল্পসমূহ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গোটা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার চালচিত্রই বদলে যাবে।

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে দেশের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত আট মেগা প্রকল্পের কাজ। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মেগা প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপ) বেশিরভাগ অর্থই থাকছে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে। আট মেগা প্রকল্পে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গড় ভৌত অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গড় আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আট মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৮১ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত এসব প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে মে মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। অগ্রগতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে, যাতে বাস্তবায়নে কোনো রকম বাধাগ্রস্ত না হয় এবং দ্রুততম সময়ে শেষ হয়। কাজ শেষ হলে দেশের মানুষ সুফল পাবে, অর্থনীতিতেও অবদান শুরু হবে।

একটি দেশের উন্নয়ন কখনোই আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। হঠাৎ করে কোনো দেশ নিজের অবস্থা বদলে ফেলতে পারে না। এর জন্য সুদীর্ঘ পরিকল্পনা ও পরিকল্পনাগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নত দেশ হতে টানা ২৫-৩০ বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর থাকা দরকার। প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। এর একটি আদর্শ মাত্রা হলো জিডিপির কমপক্ষে ২৫-৩৫ শতাংশ। কম হলে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে, বেশি হলে তারল্য সংকটসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক বাবল তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সঙ্গে জিডিপির অনুপাত বর্তমানে প্রায় ৩১.৭ শতাংশ এবং এই প্যারামিটারে দেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যকর অবস্থান ধরে রেখেছে। এর ওপর ভর করেই জাতির জনকের কন্যা বাংলাদেশের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাগ্য বদলে সুদূরপ্রসারী সব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। অনেকেই বলে থাকেন সব প্রকল্প নেয়া ঠিক হচ্ছে না। এত বড় বড় প্রকল্পের ভার বাংলাদেশ বহন করতে পারবে না। আদতে এগুলো শুধু সমালোচনার জন্যই সমালোচনা। দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা যে বাড়ছে, এসব প্রকল্প মূলত তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে হলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, বড় স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ এখন ঠিক সেই কাজটাই করছে। দেশের অর্থনীতির ওপর এগুলো কোনো চাপ তৈরি করবে না। বরং এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

যেকোনো দেশের ঋণস্বাস্থ্যের পরিমাপক হচ্ছে ডেট (ঋণ) টু জিডিপির অনুপাত। ডেট-টু-জিডিপির রেশিও যত বেশি, একটি দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকির পরিমাণও তত বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ এখন সে রকম কোনো ঝুঁকিতে নেই। বাংলাদেশের ঋণস্বাস্থ্য এখনও বেশ ভালো। বিশ্বব্যাংকের ২০১৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, কোনো দেশের ডেট টু জিডিপির রেশিও লম্বা সময়ের জন্য ৭৭ শতাংশের বেশি হলে ওই দেশের অর্থনৈতিক গতি স্তিমিত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের ঋণ জিডিপির রেশিও বর্তমানে প্রায় ৪২.৫ শতাংশ। সুতরাং এখনও আমরা অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের তফাত এখানেই। শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে ঋণ জিডিপির রেশিও মোটামুটি ১০৭ শতাংশ। বিপদসীমার অনেক ওপরে! তাদের অর্থনীতি যখন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তার কয়েক বছর আগে থেকেই শ্রীলঙ্কার এ রেশিও ১০০ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। অর্থাৎ তারা আগে থেকেই ঝুঁকিতে ছিল, সেই ঝুঁকি সামাল দিতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এমন হবে না। বাংলাদেশ যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেগুলোর যথাযথ কস্ট বেনিফিট পর্যালোচনা করেই হাতে নিয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক এসব প্রকল্প দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মানুষের স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু গত বছরই উদ্বোধন করা হয়েছে। সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। যদিও এটির কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। উদ্বোধন ও যান চলাচল শুরুর এক বছর পর এই সেতুর ব্যয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী, সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। গত মে পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৭৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ।

আরেকটি স্বপ্নের মেগা প্রকল্প হলো রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেল। রাজধানীবাসীর বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি দৈনিক গড়ে ৭৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করছেন এ বাহনে চড়ে। চলতি বছরের অক্টোবর নাগাদ মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশও খুলে দেয়া হবে। পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মে পর্যন্ত এই প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা (বাংলা ট্রিবিউন)। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

দেশের ইতিহাসে একক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঋণ পরিশোধের জটিলতায় এই প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও আগামী বছর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। শুরু থেকে মে পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

একইভাবে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে চলতি বছরের মে পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৫১২ কোটি ৮ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য আগামী বছরের জুনের মধ্যে। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে জোর গতিতে। এ প্রকল্পের অধীনে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১২টি প্রকল্পে কাজ চলছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর পর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৬১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। রামপালে তৈরি হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ এগিয়ে চলছে দিনরাত। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা চলাকালে কিছুটা ধীরগতির কারণে এখনও শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এগিয়ে চলছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণের কাজ। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। শেখ হাসিনার সরকার এমন সব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন, যা এদেশের মানুষ কখনও কল্পনাও করেনি। শুধু এ দেশের মানুষ কেন, বিশ্ব সম্প্রদায়েরও অনেকেই ভাবতে পারেনি যে, বাংলাদেশ এত কিছু করতে পারবে। এখন তারা দেখছে আর বিস্মিত হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতির ভাগ্য বদলের জন্য একটি উন্নয়নবান্ধব সরকারের কাজ হলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা, শিল্পের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রাস্তা, ব্রিজ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও রেলপথ তৈরি করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে সরকার বেশি বেশি কর, শুল্ক, ভ্যাট, চার্জ নানাভাবে অতিরিক্ত অর্থ আয় করতে পারে। আয় বাড়লে সরকারের সক্ষমতা বাড়ে। অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করার সামর্থ্যও বাড়ে। এটি একটি চক্র। আয় বৃদ্ধি পেলে এ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আরও বেশি উন্নয়ন করা যায়। আবার রাস্তা, ব্রিজ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরÑএসব যথাযথভাবে উন্নয়ন করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন থমকে যায়। সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কমে আসে। এজন্য কাজ না করে বসে থাকলে দেশের কোনো লাভ হবে না, চ্যালেঞ্জ নিয়ে হলেও কাজ করতে হবে। চ্যালেঞ্জ তারাই নিতে পারে, যারা সামর্থ্যবান, যাদের সক্ষমতা আছে। শেখ হাসিনা একের পর এক মেগা প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ হাতে নিচ্ছেন, মানে তার সেই সক্ষমতা আছে। সেই সৎ সাহসও আছে।

বাঙালির বহু দিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ যেসব বড় প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে, এর সবই সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির চক্রে ইতিবাচকভাবে কাজ করবে, দেশকে এগিয়ে নেবে। বিনিয়োগ জিডিপি রেশিও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না এলে এ ধরনের বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে না; রাস্তা, ব্রিজ, সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, জ্বালানি-বিদ্যুৎ প্রভৃতির সামগ্রিক অবস্থা ভালো রাখা সম্ভব হবে না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, উন্নয়ন কাক্সিক্ষত গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে। অর্থাৎ সরকারকে যেকোনোভাবে বাজেটে উন্নয়ন খাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকার সংস্থান রাখতে হবে। সেই কাজটাই করছে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার এবং সুফল পাচ্ছে। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ থাকবে না। তৈরি হবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এক নতুন বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার