মেলান্দহে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ ও ফসলি জমি

সাহিদুর রহমান, জামালপুর: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় প্রভাবশালীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গড়ে তুলেছেন ১৮টি ইটভাটা। এর মধ্যে এক ইউনিয়নেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১০টি ইটভাটা। বজায় রাখা হয়নি পর্যাপ্ত দূরত্ব। আর ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি থেকে তোলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাটি। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্থানীয়দের চাষাবাদের ফসলি জমি। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

নীতিমালা অনুযায়ী, ফসলি জমি, বসতি এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও সদর রাস্তার পাশে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গোপনে প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমি ও বসতি এলাকার পাশ দিয়ে সদর রাস্তার সঙ্গে সরকারি কলেজ ও হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। মেলান্দহ উপজেলার পাঁচ নম্বর নয়ানগর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি ইটভাটা। এছাড়া ছেন্না (সাবেক নয়ানগর ইউনিয়ন) গ্রামে তিনটি ও মেঘার বাড়িতে দুটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।

উদনাপাড়া, বুরুঙ্গা, বানিপাকুরিয়া, মামাভাগিনা, বজরদ্দিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাতে ঢুকতেই চোখে পড়ছে ফসলি জমির ‘টপ সয়েল’ কেটে নেওয়ার ভয়াবহ চিত্র। মাটি কাটার মেশিন দিয়ে দিনরাত ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক গুনু মিয়া বলেন, টপ সয়েল কেটে ফেললে ফসল উৎপাদন কম হবে জেনেও মাটি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ফাঁদে পড়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। একই ফাঁদে পড়েছেন সেখানকার কৃষক জহুরুল হক, ওয়াদুদ ও আবদুল্লাহসহ অনেকেই। তাদের অনেকের ক্ষেতে বারো মাসই পানি জমে থাকে বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ইটভাটার মালিক কর্তৃপক্ষ কিছু দালালচক্রের মাধ্যমে সহজ-সরল কৃষকদের কৌশলে অর্থের লোভ দেখিয়ে কৃষিজমি থেকে মাটি সংগ্রহ করছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে আবাদি জমি। এভাবে চলতে থাকলে চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই এ এলাকায় চাষের উপযোগী জমি থাকবে না বলে উপজেলা কৃষি অধিদফতর জানিয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়েছে কৃষি ফসল, সবজি, গাছের ফলমুল ও গবাদিপশুসহ মানুষের ওপর। অনেক গাছপালার ফলন কম হচ্ছে, কিছু গাছে ফল ধরা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে নারিকেল-সুপারি-কলাতে অজানা রোগ দেখা দিচ্ছে।

উপজেলার উদনা পাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবদুর রহিম জানান, তার বাড়ি পাশাপাশি আটটি ইটভাটার মাঝামাঝি জায়গায় পড়েছে। ফলে আগের চেয়ে ধান উৎপাদন কমে গেছে। অনেক নারিকেলগাছেই ফল ধরে না। আরেক কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, ভালো ফসলের জন্য ভালো মাটির প্রয়োজন। এভাবে মাটি গ্রাস করতে থাকলে সামনে জমিগুলোতে ফসলের ফলন একেবারেই কমে যাবে।

আর জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিন বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রবিহীন ও আইন না মেনে ফসলি জমি ও বসতিতে স্থাপনকৃত কয়েকটি ইটভাটা ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। মেলান্দহে ফসলি ও বসতি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের কোনো অনুমতি নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স না নিয়েই ফসলি জমি লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে, স্থানীয় ইটভাটার মালিক নূরুল ইসলাম নবাব ও বাদশা ব্রিক্সের মালিক বাদশা মিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে পরে দেখা করার জন্য বলেন।