Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 2:26 pm

মেসেজ দিয়ে বিকাশে বেতন আদায় করছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের উহান থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে টালমাটাল করে দিয়েছে। এর বিস্তার বাংলাদেশেও ঘটছে বেশ দ্রুত। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। কারণ অনেকের চাকরি নেই, আয়ের পথও বন্ধ।

এ অবস্থায় বিশেষত বাড়িভাড়া, খাদ্যের সংস্থান ও সন্তানের প্রতিষ্ঠানের বেতন দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। যেখানে অনেক পরিবার খাবারের সংস্থান করতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছে, সেখানে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বেতন আদায় করছে। সেক্ষেত্রে বিকল্প পন্থা বাতলে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন।

অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠান সামান্য জরিমানা দেওয়ার শর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেতন দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে করোনা মহামারির মধ্যেও অভিভাবকদের চাপ দিয়ে বেতন আদায় করছে রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এমন অভিযোগ উঠেছে।

তারা অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধ করতে বলেছেন। সেজন্য ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেতন না দিলে জরিমানা গুনতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়েও সে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকদের মোবাইলে যে মেসেজ পাঠানো হয়েছে, সে ধরনের একটি বার্তা ওয়েবসাইটেও দিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এমনকি বেতন প্রদানের নিয়মও আলাদাভাবে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে চাপ প্রয়োগ করে বেতন আদায়কে অমানবিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন একাধিক অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন, করোনার কারণে অনেকের চাকরি চলে গেছে, আয়ের পথ বন্ধ। অনেকের বেতন বন্ধ।

এ অবস্থায় যেখানে বাড়িভাড়া ও খাবারের সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে এভাবে বেতন আদায় তাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো হয়ে গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত বেতন আদায় স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

তবে এভাবে বেতন আদায়ের বিষয়ে ভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদা আলী। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকলেও সব শাখার শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন, হোমওয়ার্ক দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি আয়ের মূল উৎস হওয়ায় তা থেকে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন না নিলে শিক্ষকদের বেতন কীভাবে দেব?’ তবে করোনার কারণে বেতন পরিশোধে কারও সমস্যা হলে বিবেচনা করবেন বলে তিনি জানান।

এদিকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার যে দাবি করেছেন, তা পুরোপুরি সঠিক নয় বলে একাধিক অভিভাবক দাবি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, নিচের দিককার জুনিয়র শ্রেণির কোমলমতি শিশুদের ক্লাস অনলাইনে হচ্ছে না। শুধু ওপরের দিকের কিছু ক্লাসের কার্যক্রম ও হোমওয়ার্ক অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির কিছু ক্লাস এভাবে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম রশিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা একটা প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় এক হাজার ১০০ শিক্ষকসহ দেড় হাজার মানুষ কর্মরত আছেন। তাদের দিকটাও তো দেখতে হবে। তাদেরও তো বেতন দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষককে বলে দিয়েছি, অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের কেয়ার নিতে। তবে আমরা এখন আর বেতন দিতে প্রেশার দিচ্ছি না। যারা পারবে দেবে। বাকিটা পরে দেখা যাবে।’

জানা গেছে, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাজধানী ঢাকায় উত্তরা, বনানী, মিরপুর, মালিবাগ ও বারিধারায় শাখা রয়েছে। এতে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।