আবু সাঈদ সজল, রাবি: করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহীর মেসগুলোও। এতে মেসে অবস্থান করছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু মাস পেরোলেই গুনতে হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাড়া। এদিকে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত নেন রাজশাহীর মেস মালিকরা। তবে মওকুফের কথা থাকলেও ভাড়ার পুরো টাকাই দিতে হচ্ছে মেসে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে।
অন্যদিকে মেস ভাড়ার এ সমস্যা নিরসনে নানা আশ্বাস দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মেস মালিকদের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের কোনো সুরাহা করতে পারেনি তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হল মিলে মাত্র সাড়ে সাত থেকে আট হাজার শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে বাইরে ভাড়া মেসে থাকতে হয়। ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফ না করে সম্পূর্ণ ভাড়া আদায় করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে মেসে অবস্থান করা এসব শিক্ষার্থীর।
মো. সাইফুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেই মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বাড়িতে থেকেও বিদ্যুৎ বিলসহ সম্পূর্ণ ভাড়া দিতে হচ্ছে এটা অমানবিক। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৫০ টাকাও দিতে হয়েছে আমাকে।’
নজরুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সাত মাসে ভাড়া সাত হাজার টাকা হবে। মেস মালিক বলছে, এক মাসের ভাড়া বাদে বাকি সব মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে। কত নিষ্ঠুর, নির্দয়, অমানবিক! আমি অবশ্য ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। বাকিটা ভাড়াও চাচ্ছে।’
লিনা মঞ্জিলা আনিকা বলেন, ‘আমি এর মধ্যে মেসে গিয়েছিলাম সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখতে। এ সময় মেস মালিক বলেন, ফুল পেমেন্ট না দিলে কিছু দেখতে দেবেন না। আমি বললাম কিছু টাকা দেব। সে বলে, আগে পেমেন্ট তারপর দেখবা। আসলেই কি আমরা মেস মালিকদের কাছে জিম্মি?’
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা এপ্রিল এবং মে সম্পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করবে। জুন মাসের ভাড়া অসচ্ছল ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে মওকুফ করা হবে। জুলাইয়ের পর থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থী অর্ধেক ভাড়া পরিশোধ করবে। তবে সিট ছেড়ে দিলে পুরো ভাড়াই পরিশোধ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো মেস মালিক ৫০ শতাংশ মওকুফ না করলে কী পদক্ষেপ নেবেনÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর কাছে জুলাইয়ের পর থেকে সম্পূর্ণ ভাড়া দাবি করলে আমাদের সমিতিতে যোগাযোগ করলে ৫০ শতাংশ মওকুফ করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর এসব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
মেস ভাড়ার ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আগে বিনোদপুর, মেহেরচণ্ডী নিয়ে একটি মেস মালিক সমিতি ছিল। এ কারণে দ্রুতই রাবি শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিরসন করা সম্ভব ছিল। বর্তমানে মহানগর মেস মালিক সমিতির আওতায় সবাই। এ জন্য অনেক বিষয়ই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও শিক্ষার্থীদের প্রতি এ অমানবিকতাকে মেনে নেওয়া যায় না। রাবি প্রশাসন শিগগিরই রাসিক মেয়রের মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসনে মিস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করবে।’
এর আগে গত ১০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মেস মালিক সমিতির এক যৌথ সভায় এপ্রিল মাস থেকে প্রত্যেক বোর্ডারকে নিজ নিজ ভাড়ার ৬০ শতাংশ দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মাস পেরোতে না পেরোতেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মেস মালিকরা পুরো ভাড়াই দাবি করেন।