এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এটি আগামী ১৪ মে (রোববার) সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অগ্রভাগ চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নি¤œচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এটি এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়েছে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণি বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থলভাগে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এই দুই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ। মোখার এই চোখ রাঙানিতে তীব্র ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের আনোয়ারার উপকূলজুড়ে। দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় চিত্রাংয়ের সময়ও গহিরা এলাকায় বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় এলাকার দুই গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
শুক্রবার সরেজমিনে উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এরই মধ্যে জোয়ারের পানির জোরে উপজেলার জুঁইদণ্ডী, সরেঙ্গা, রায়পুর, পূর্ব গহিরা ও দক্ষিণ গহিরা এলাকার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এলাকার মানুষ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কিছু কিছু জায়গায় কাজ চললেও এখনও উপকূলের বিভিন্ন অংশ খোলা রয়েছে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নেও পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূল সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। কর্ণফুলী নদী, বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খ নদী বেষ্টিত এ অঞ্চলের বারশত, রায়পুর, বরুমচড়া, বারখাইন ও জুঁইদণ্ডী ও হাইলধর ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে থাকে সবসময়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারার প্রায় চার কিলোমিটার উপকূল এখনও অরক্ষিত। একই সঙ্গে সাঙ্গু তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা আছে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভাঙাচোরা।
স্থানীয়রা জানান, উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবি সত্ত্বেও এখনও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি, যার কারণে দুর্যোগ এলে আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর। যদিও সিত্রাংয়ের আঘাতে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ব্যাপকভাবে কাজ করেছে, তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা কোস্টগার্ড এলাকা থেকে ফকির হাট এবং ঘাটকুল থেকে নজুমিয়া ঘাট পর্যন্ত এলাকা।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বেড়িবাঁধে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় জিও ব্যাগ দেয়া হচ্ছে। রায়পুর ইউনিয়নে উপকূলে বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। এছাড়া সচেতনতামূলক মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ারা অনুপম দাশ ও নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মোখা মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা হলরুমে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ শুরু করেছেন। উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় সার্বিক ব্যবস্থাও নিয়েছেন বলে জানান তিনি।