নিজস্ব প্রতিবেদক: শুধু সুপারশপ বা মুদির দোকান নয়, চায়ের দোকানেও এখন মোবাইলের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যায়। বিশেষ করে করোনার মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে ব্যাপক হারে। সংক্রমণ এড়াতে নগদ টাকার লেনদেন কমিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে বিল পরিশোধেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে জনগণ। ফলে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মোবাইলের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা বেড়েছে তিনগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে (২০২১) ৩৪ হাজার ৬২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা পণ্য কেনাকাটায় পরিশোধ করেছেন জনগণ। এক বছর আগে মোবাইলের মাধ্যমে কেনাকাটার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। সুতরাং বছরের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে মোবাইলে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধের হার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। তবে ডাক বিভাগের সেবা নগদের তথ্য এখানে হিসাব করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজারে। এর মধ্যে গ্রামে ৬ কোটি ২২ লাখ এবং শহরের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৯২ লাখ। এছাড়া নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি এবং মহিলা গ্রাহক প্রায় ৫ কোটি রয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৮ জন। এমএফএস এ গত বছরের ডিসেম্বরে মোট ৩৪ কোটি ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৩টি লেনদেনের মাধ্যমে ৭১ হাজার ১৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অনেক সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ১৩ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিকাশ, রকেট, নগদ ও এম ক্যাশ অন্যতম। করোনাভাইরাসের কারণে ভিড় এড়াতে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবার ক্ষেত্রেই বাড়ছে মোবাইলে লেনদেন।
তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। যার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ।