নিজস্ব প্রতিবেদক: সময়ের ব্যবধানে লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং। একটা সময় একে বিলাসিতা ভাবতেন অনেকে। কিন্তু এখন আর তা নেই। বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বেড়ে চলেছে লেনদেন প্রবৃদ্ধির হার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ছয় লাখ ৮৬ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে আগের বছর চার লাখ ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক। সারা দেশে এসব সেবায় নিবন্ধন হয়েছে প্রায় ১০ কোটি। যদিও সক্রিয় ব্যবহারকারীর হিসাব চার কোটির কিছুটা কম। এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের ছোট লেনদেনেও। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান দেয়ার অন্যতম মাধ্যম। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টদের কাছেও যেতে হচ্ছে না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজে টাকা আনা যাচ্ছে এসব হিসাবে। আবার এসব হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা শুরু হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেয়া যাচ্ছে। ফলে একটি মুঠোফোনই যেন একেকজনের কাছে নিজের ব্যাংক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এর নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, নগদ ও রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এ বাজারের বেশিরভাগই বিকাশের নিয়ন্ত্রণে। এরপর রয়েছে নগদ ও রকেট। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু লেনদেন হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে সব মিলিয়ে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৬২ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। জুনে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ১৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। আর ১৫ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে তিন হাজার ২৯৩ কোটি টাকা কেনাকাটা বিল পরিশোধ করেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে ১৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা পাঠানো হয়। এছাড়া মে মাসে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয়া হয় দুই হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ হয় এক হাজার ২৪৪ কোটি টাকার।