Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 4:46 pm

মৌলভিত্তি থাকা সত্ত্বেও চাহিদা কম

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: মৌলভিত্তি হওয়া সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা এবং দাম তুলনামূলক কম। সাধারণত শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভিপিএস বেশি থাকেলে সেই কোম্পানিকে ভালো মৌলভিত্তির হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর স্বাভাবিকভাবে বাজারে সেই শেয়ারের চাহিদা বেশি থাকার কথা। কিন্তু তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও তাদের বেলায় উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।  ফেসভ্যালুর ভিত্তিতে এসব শেয়ারের দরও সন্তোষজনক নয়। এমনই কয়েকটি কোম্পানি হচ্ছে: বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), এটলাস বাংলাদেশ, যমুনা অয়েল, বেক্সিমকো, পদ্মা অয়েল, ইউনিক হোটেল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ও এবি ব্যাংক।

সন্তোষজনক সম্পদমূল্য থাকার পরও এসব শেয়ারের চাহিদা কম থাকা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের।  শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য যদি সঠিক হয়, তাহলে সে শেয়ারের চাহিদা কম থাকার কথা নয়। এসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন।

এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ারদর ও চাহিদা কমার প্রবণতা দেখে অনুমান করা যায় এসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। তা না হলে বছরজুড়ে এসব শেয়ার চাহিদার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকতো না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যে এগিয়ে থাকা কোম্পানির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে বিএসসি। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য প্রায় ৬০৩ টাকা। সে বিবেচনায় বিনিয়োগকারীদের কাছে এই শেয়ারের চাহিদা কম। ফেসভ্যালু পরিবর্তন হবে এমন খবরে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর কিছুটা বাড়লেও বর্তমানে আবার ভাটা পড়েছে। লেনদেনও আগের চেয়ে কমে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমে এসেছে তিন লাখ থেকে দেড় লাখে। আর তিন কার্যদিবসের ব্যবধানে প্রতিটি শেয়ারদর কমে গেছে ২১ টাকা। এদিকে সম্পদমূল্য ভালো থাকলেও ভাটা পড়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারদর ও চাহিদায়। কোম্পানিটির লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে একদিনে সর্বোচ্চ এক কোটি ৭৭ লাখ চার হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। বর্তমানে তা নেমে এসেছে এক কোটি ১৬ লাখে। শেয়ারের চাহিদা কমার পাশাপাশি কমে গেছে দরও। সম্প্রতি এ শেয়ারদর ৩৮ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে কমে গেছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের দরও। মাসের ব্যবধানে প্রায় পাঁচ লাখ শেয়ার লেনদেনের পরিবর্তে তা চার লাখ ৬২ হাজারে নেমে এসেছে। এদিকে শেয়ারপ্রতি সম্পদে শীর্ষে থাকা এবি ব্যাংকের শেয়ার চাহিদাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। জানুয়ারিতে এ কোম্পানির একদিনে সর্বোচ্চ এক কোটি ৬০ হাজার শেয়ার লেনদেন হলেও গতকাল তা নেমে এসেছে ১৯ লাখে। কমে গেছে শেয়ারদরও। কিছুদিন আগে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ২৬ টাকায় লেনদেন হলেও এখন তা ২২ টাকায় নেমে এসেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানি যদি কোনো সংবেদনশীল হিসাবে গরমিল করে, তা দেখার দায়িত্ব বিএসইসির। কোনো কোনো কোম্পানি নিজের শেয়ারদর বাড়ার জন্য এমন করে; তবে সবাই নয়। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি সচেতন। কোনো কোম্পানির ইপিএস বা এনএভি নিয়ে সন্দেহ হলে তারা সতর্ক হন। এটা ভালো লক্ষণ। একই প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ারদরের চাহিদা নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের মর্জির ওপর। তাদের চাহিদা থাকলে শেয়ারদর বাড়ে; আবার চাহিদা না থাকলে কমে যায়। তবে শুধু এনএভি ভালো থাকলেই একজন বিনিয়োগকারী সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন এমন ধারণা করাও ভুল। তারা ইপিএস ও লভ্যাংশের হিসাব করেন সবার আগে।

এ প্রসঙ্গে ইউনিক হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কোম্পানির সার্বিক অবস্থা ভালো বলেই শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বেশি। তবে চাহিদা থাকা-না থাকা সম্পূর্ণই বিনিয়োগকারীর ব্যাপার। এটা আমাদের জানার কথা নয়। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির কোন বিষয়টি মাথায় রেখে শেয়ার কিনবেন সেটা তাদের ইচ্ছে।