Print Date & Time : 5 August 2025 Tuesday 2:13 pm

ময়মনসিংহের নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে

 

এম ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ:  নাব্য সংকট, কৃত্রিম বাধার সৃষ্টি, পলি জমা, অবৈধ দখলসহ নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ময়মনসিংহের অর্ধশত নদ-নদী। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে অনেক নদী। বেশিরভাগ নদীর বুকজুড়ে এখন ফসলের ক্ষেত।

ময়মনসিংহ জেলার ৪৭টি নদী, উপনদী বা শাখা নদীর উজ্জ্বল অতীত থাকলেও বর্তমান বড়ই করুণ। জেলার প্রধান নদ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। এ নদ ঘিরেই ময়মনসিংহ শহরের গোড়াপত্তন। একসময় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রশস্ততা ছিল ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার। আজ তা ভরাট হতে হতে স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ মিটারে ঠেকেছে। শুষ্ক মৌসুমে জল থাকে না, ধূ-ধূ চর জেগে উঠে স্থানে স্থানে, নাব্য হারিয়ে শীর্ণ এখন এ নদ। নদের কোথাও

কোথাও এখন একেবারেই ক্ষীণ জলরাশি। হেঁটেই পারাপার হচ্ছে মানুষ।

প্রধান এ নদের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ভূমি চিরে বয়ে চলা ঝিনাই, আয়মন, সুতিয়া, বানার, খিরু, ঠাডাকুড়া, ঘরোটা, সিমাহালি, নরসুন্দা, বোখাই, নিতারী, সোমেশ্বরী, কংশ, গুনাই, কাঁচামাটিয়া, পানকুরা, সাইদুল, মগরা, রাংরা, খারমোরী, মহাদেব, যদুকাটা, ধনু, বোয়ালাই, শিরখালি, সিংড়া, চেল্লাখালী, মতিচিক, চালহি, বংশাই, মানস, পুতিয়া, জিনজিরাম, সুবনফিরি, বলেশ্বর, ভোগাই কংসা, কউলাই, সিলাই, খারমেনি, সাতারখালী, তারাটিয়া, ঘাগটিয়া, ঝগড়াখালী, নবগঙ্গা, মরা নেতাই, বেনিপোড়া, রূপালী, রাঙ্গানিয়া, মেকিয়ারকান্দা, মালিঝি, খড়িয়া, বালুয়া, আনই, আখিল, বাইজানাসহ প্রায় অর্ধশত নদীর অবস্থা খুবই করুণ।

প্রমত্তা আয়মন নদীর তীরে আলেপশাহী পরগনার প্রথম জমিদার গড়ে তুলেন মুক্তাগাছা শহর। ছোট শহরের তিন দিকে এ নদীর চলনপথ। কিন্তু সেই আয়মন নদী ক্রমে খাল হলে এখন বিস্মৃতির পথে হাঁটছে। এখানকার শাখা নদী ঠাডাকুড়ার অবস্থা আরও করুণ। অন্যতম নদী বানার কিংবা সুতিয়া ভরা বর্ষায় সামান্য নড়াচড়া করলেও শুষ্ক মৌসুমে পড়ে থাকে মৃত সাপের মতো। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোর বুক চিরে নৌকা চলে না বরং থাকে বিস্তৃৃত ফসলের মাঠ। ব্রহ্মপুত্র ছাড়াও কংশ ও নেতাইকে নদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কংশ নদ ভর বর্ষায় ফুলে ফেপে উঠলেও বাকি সময় জীর্ণ অবস্থা। বিস্তীর্ণ চরে তখন ফসলের সমাহার। ধোবাউড়ার সাতারখালী, তারাটিয়া, ঘাগটিয়া, ঝগড়াখালী, নবগঙ্গা, মরা নেতাই, বেনিপোড়া, রূপালী নদী, রাঙ্গানিয়া, মেকিয়ারকান্দা, নদীগুলোর বর্তমান অবস্থাও একই।

বিভিন্ন মৌজার ম্যাপের নদী, হালট, গোপাট, সিকস্তি, আড়ংঘাটায় এখন রয়েছে ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি অথবা নানা গাছপালা। হালুয়াঘাট উপজেলার পাহাড়ি নদী সূর্যপুরডালা। গারো পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে ঝরনার জল, পাহাড়ির ঢল হয়ে নামে এ পথে। এখন সারা বছর অচল। এছাড়া দর্শা, গাঙ্গিনী, বুড়া ভোগাই, মেলং সেওয়াল, পচনধরা, ভোরাঘাট নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমে মৃতপ্রায়। তারাকান্দায় নৌ আবহাওয়া দফতর থাকলেও তারাকান্দা কিংবা ফুলপুর উপজেলার উপনদীগুলোতে নৌপথ নেই। তারাকান্দার রাংসা হচ্ছে ধ্বংস। খড়িয়া নদী খরা আর জলাবদ্ধতাই শেষ কথা। কালোমাটির

জন্য বিখ্যাত নদী কাঁচামাটিয়া ঈশ্বরগঞ্জ-নান্দাইলের নদী। খনিজ সম্ভাবনাপূর্ণ এ নদী বর্ষা ছাড়া অন্যান্য মৌসুমে ধানক্ষেত।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরের আখিল, বানার, আনই, একেকটি নদীর নাম বড়ই মায়াময়। এসব নদীতে নৌকা চলে না। মাছ পাওয়া যায় না। ত্রিশালের সুতিয়া, শিলা ও খিরু দক্ষিণ ময়মনসিংহের বড় নদী। এগুলো এখন ছোট খাল। ভালুকার সুতিয়া, খিরু ও শিমুলিয়ার দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে।

জেলার সুতিয়া, শীলা, বানার, নরসুন্দা, কাঁচামাটিয়া, কংস, নেতাই, ক্ষীরু, মেনান, শাওয়াল নদ-নদীগুলোও পলি জমে নাব্য হারিয়েছ। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোর বুক চিরে জেগে ওঠা চরে কিশোররা মেতে ওঠে ক্রিকেট-ফুটবল খেলায়।

ভারত সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় কংস, নেতাই, ক্ষীরু, মেনান, শাওয়াল নদ-নদীগুলো পাহাড়ি ঢলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন পাহাড়ি ঢল নামলেও পলি জমার কারণে পানি নেই। এছাড়া সুতিয়া, শীলা, বানার, নরসুন্দা, কাঁচামাটিয়া নদ-নদীর পানি নির্ভরশীল ব্রহ্মপুত্রের ওপর। ব্রহ্মপুত্রের খনন নেই বলে ওই নদ-নদীগুলোও সরু খালে পরিণত হয়েছে। মৎস্যজীবীরাও পেশা পাল্টে ফেলেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদসহ ময়মনসিংহের সব নদ-নদীই এখন নাব্য সংকটে। নদীগুলো খননের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই।