Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 3:45 pm

যমুনার স্রোতে সিরাজগঞ্জে স্পার বাঁধের ৭০ মিটার বিলীন

প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: যমুনার তীব্র স্রোতে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বেতিল স্পার-১ এর প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ধসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ধস ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে মেরামত কাজ শুরু করেছে। গতকাল সোমবার সকালে এনায়েতপুরে বেতিল স্পার-১ এর আকস্মিক ধস নামায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ধসের বিস্তৃতি ঠেকাতে পাউবো জরুরি ভিত্তিতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে মেরামত কাজ শুরু করেছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বানভাসি মানুষের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ। পানিবন্দি এলাকার অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর ভাঙনের হাত থেকে এনায়েতপুর রক্ষায় ২০ বছর আগে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বেতিল স্পার-১ নির্মাণ করা হয়। এ বছর বন্যার শুরুতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির পর থেকে স্পারটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে কয়েকদিন ধরে যমুনা পানি কমতে থাকায় নদীতে প্রচণ্ড স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়।

গতকাল সোমবার সকালে যমুনার তীব্র স্রোতে আকস্মিকভাবে স্পারের ডান সাইডে প্রায় ৭০ মিটার এলাকাজুড়ে ধস নামে। এ কারণে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের আজুগড়া-বেতিল এলাকা, স্পার-সংলগ্ন সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজ ও মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটসহ বহু তাঁত কারখানা ও অসংখ্য ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড স্পারে ধস ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করেছেন। বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও ইউএনও আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে স্কাউয়ারিংয়ের ফলে বেতিল স্পারের প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। খবর পেয়ে সকাল থেকেই জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, মেরামত কাজ শেষ হলে আশা করছি ঝুঁকি কমে যাবে।

এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলা ও উপজেলার সঙ্গে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদীভাঙন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হয়।

যমুনার পানি বাড়ায় জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের পাট, ধান, তিল, বাদামসহ প্রায় চার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পাউবোর পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমতে শুরু কমলেও এখনও বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঈদের আগে যমুনায় তৃতীয় দফা পানি ফের বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।