মীর কামরুজ্জামান, যশোর: একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। এই দুই কারণে যশোরের ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানগুলোয় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকার ভোগান্তি এড়াতে এবং গরমে ঘর ঠাণ্ডা করতে মানুষ ছুটছে বিকল্প ব্যবস্থার দিকে। ভিড় বাড়ছে চার্জার লাইট, চার্জার ফ্যান, আইপিএস, ইউপিএস, এসি ও এয়ারকুলারের দোকানে। আর বর্ধিত এই চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা, এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।
যশোরের বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে যশোরে এসি, ফ্যান, চার্জার ফ্যান, এয়ারকুলার, আইপিএস ও ইউপিএসের বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। আর বর্ধিত এ চাহিদার কারণে দামও বেড়েছে।
যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা শওকত আলী বলেন, ‘এসি কেনার ইচ্ছে আসলে ছিল না। যা গরম পড়েছে, প্রচণ্ড গরমে বাসায় থাকা ছোট শিশুরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সে কারণে এসি কিনতেই হলো। বাচ্চাদের নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমানো যাবে আশা করছি।’
শহরের রেলরোড এলাকার গ্লোবাল মার্ট নামে ইলেকট্রনিক শপে স্ত্রীকে নিয়ে এসি কিনকে আসা যশোর সদরের বাহাদুরপুরের রাকিব বলেন, ‘দেড় টন একটা এসি কিনতে এসেছি। এসি এখন আর বিলাসিতা নয়। সময়ের প্রয়োজনে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যশোরে যা গরম পড়ছে, রাস্তায় বের হওয়া যেমন সম্ভব হয়ে উঠছে না, তেমনি ঘরের ভেতরে থাকা দায়। প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল অবস্থা। সে কারণে ধারদেনা করে এসি কিনছি।’
যশোরে রেলরোড এলাকার ইলেকট্রিক পণ্যের দোকান গ্লোবাল মার্টের ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এখন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রচণ্ড গরমের কারণে এবং ঈদে মানুষের হাতে টাকা থাকায় এসি বিক্রি হয়েছে বেশি। প্রতিদিন ১০-১৫টি এসি বিক্রি করছি আমরা। শহরকেন্দ্রিক ক্রেতা বেশি হলেও বর্তমানে গ্রামের ক্রেতারাও আসছেন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে এসির কিছুটা সংকট আছে। এবার যে পরিমাণ এসি বিক্রি হচ্ছে, তা গত কয়েক বছরেও হয়নি।’
যশোর শহরের বেস্ট ইলেকট্রনিক্সের এক্সিকিউটিভ শিমুল রহমান বলেন, ‘আমাদের শোরুম থেকে প্রতিদিন ১০টিরও বেশি এসি বিক্রি হচ্ছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।’
যশোরের সিঙ্গার শোরুমের শাখা ব্যবস্থাপক হুমায়ুন আজাদ বলেন, ‘আমাদের শোরুমে এখন এসির সংকট আছে। প্রতিদিন ১৩-১৪টি বিক্রি করেছি। এক দিনে সর্বোচ্চ ২০টি বিক্রি করেছি। এখনও প্রচুর চাহিদা আছে।’
শহরের ওয়ালটন শোরুমের এক্সিকিউটিভ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক চার্জার ফ্যান বিক্রি করেছি। তিনটি সাইজের পাঁচ মডেলের এসব চার্জার ফ্যান তিন হাজার ৯৯০ থেকে শুরু করে ছয় হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত দাম নেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ালটনের দেড় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতিদিন ২০টির বেশি এসি ও ফ্যান বিক্রি হচ্ছে।’
স্যামসাং শোরুমের সেলস এক্সিকিউটিভ সজীব পাল বলেন, ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে দামি এসি আছে। তবু ভালোই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ১০টির মতো বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম একটু বেড়েছে। এটি চাহিদার কারণে নয়, দাম আগেই বেড়েছে।’
শহরের মাইকপট্টি এলাকার ওলিয়ার ইলেকট্রনিকসের মালিক ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার সবচেয়ে বেশি বিক্রি করছি। প্রতিদিন এসব জিনিস ১৫-২০টির মতো বিক্রি হয়। তবে দাম আগের মতোই।’
গাজী ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০টির বেশি রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ ধরে ফ্যানের চাহিদা বেশি।’
যশোর মনিহার বাসস্ট্যান্ড ব্যাটারি মার্কেটের রিপন ব্যাটারির স্বত্বাধিকারী রিপন হোসেন বলেন, ‘আইপিএস বিক্রি হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি আইপিএস ও ইউপিএস বিক্রি করছি।’
উল্লেখ্য, ১০ দিন ধরে যশোরে ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং।