যশোরে ‘এ’ পজিটিভ রোগীর শরীরে দেয়া হলো ‘বি’ পজিটিভ রক্ত!

প্রতিনিধি, যশোর: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সালেহা বেগম (৭৫) নামে এক রোগীর শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেয়া হয়েছে। ‘এ’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দেয়ায় বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সালেহা বেগম। হাসপাতালের বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের টেকনিশিয়ান রক্তের সঠিক গ্রুপ নির্ণয় করতে না পারার কারণে এমনটি হয়েছে। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর রশিদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। সালেহা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণবাটি গ্রামের মৃত শামছুর রহমান গাজীর স্ত্রী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৯ সন্তানের জননী সালেহা বেগমের রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকায় গত ২০ মে দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার শরীরে তিন ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওয়ার্ডের সেবিকারা গ্রুপিং ও ক্রসম্যাচিংয়ের জন্য রোগীর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে স্বজনদের হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে পাঠান।

স্বজনরা ব্লাড ব্যাংকে নমুনা দিলে সেখান থেকে জানানো হয় রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজিটিভ। সে মোতাবেক রোগীকে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দেয়া হয়। এ সময় রোগীর শরীরের জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হলে ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা কৌশলে রোগীকে ঢাকায় রেফার করেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা সালেহা বেগমকে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে যাওয়ার পরে রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তখন স্বজনরা রোগীকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সালেহা বেগমের মেয়ে শিরিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ভুলের কারণে আমার মায়ের জীবন এখন সংকটাপন্ন। তিনি খুবই অসুস্থ। প্রতিদিনই তার শরীরের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। কিছু খেতে পারছেন না। আমি এর বিচার চাই।’

শিরিনা আক্তার আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পরে আবারও চিকিৎসকরা আমার মায়ের শরীরে রক্ত দিতে বলেন। তখন আবার পরীক্ষা করে জানানো হয় রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সন্দেহ হলে ডাক্তার গৌতম কুমারকে দেখান। তখন তিনি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে রক্তের গ্রুপিং করতে বলেন। পরে শহরের সারনরাইজ ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করলে রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজিটিভ আসে।

এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা রোগীর শরীরে রক্ত না দিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন আর রশিদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ব্লাড ব্যাংক থেকে দুই ধরনের রিপোর্ট দেখে তিনি হতবাক হন। হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ চঞ্চল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নার্সরা রোগীর রক্তের নমুনা স্বজনদের কাছে দেন। তারা সেই নমুনা ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে আসেন। এরপর পরীক্ষা করে রক্তদাতার রক্তের ম্যাচিং করে রক্ত নেয়া হয়। রক্তের গ্রুপ পরিবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হলো বুঝতে পারছি না। একই নামে একাধিক জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করায় এমন ভুল হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। আবার সংশ্লিষ্ট নার্স যখন রক্ত সংগ্রহ করে, তারাও ভুল করতে পারেন।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন আর রশিদ বলেন, এটি দুঃখজনক ঘটনা। রোগীর স্বজনরা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি করা হবে। এ ব্যাপারে কারও কোনো গাফিলতি থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।