মীর কামরুজ্জামান, যশোর: আর কয়েকদিন পরেই ঈদুল ফিতর। ঈদ-উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাহারি সাজগোজের শপিংমলের পাশাপাশি সরগরম হয়ে উঠেছে যশোরের ফুটপাতের পোশাকবাজারও। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় এসব দোকানে স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটায় জমে উঠেছে।
যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে শুরু করে কালেক্টরেট, মোমিননগর ও জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে এবং বাবুবাজার এলাকার ফেন্সিমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতাদের বেশিরভাগই নিন্ম ও মধ্যআয়ের মানুষ, যাদের অভিজাত শপিংমলগুলোতে যাওয়ার সাধ্য নেই। এসব দোকানের বিক্রেতারা জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বেচাকেনাও ততই বাড়ছে। অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো জিনিস কিনতে অনেকেই আসছেন এসব দোকানে।
সারি সারি ছোট্ট এসব দোকানে ছেলেমেয়েদের কাপড়ই বেশি। পাশাপাশি বড়দের জন্যও পাওয়া যাচ্ছে। বাবুবাজার এলাকার ফেন্সি মার্কেটে রয়েছে নিন্মবিত্ত কিশোরীদের আবদার মেটানোর চুড়ি, প্রসাধনও। ফেন্সি মার্কেটের সামনে দিনমজুর আবদুল আলিম জানান, বড় মার্কেটে গরিবদের কেনার মতো কাপড় নেই। অনেক দাম। কিন্তু ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড় দিতে না পারার চেয়ে কষ্টের কিছু নেই।
দড়াটানা পার হয়ে কালেক্টরেট মার্কেটে সামনে জেলা পরিষদের অস্থায়ী ঈদ মার্কেটে শোভা পাচ্ছে নারীদের জন্য দেশি সুতি কাপড়ের বিভিন্ন পোশাক। অন্যদিকে, ছেলেদের জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শার্ট, সুতির প্যান্ট, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, ফতুয়া প্রভৃতি। রয়েছে শার্ট ও প্যান্টের থানকাপড়।
এ মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, এসব দোকানে শিশু ও মেয়েদের কাপড় বেশি। এখানে পোশাক যে দামে বিক্রি হয় তা অন্যান্য বড় শপিংমলে বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। তারা সরাসরি বিভিন্ন গার্মেন্ট থেকে কম দামে কাপড়ের লট কিনে আনেন। তাই বিক্রিও করেন কম দামে। কেনাবেচা বেশ ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শহরের মুজিব সড়কে দড়াটানা থেকে শুরু করে জজকোর্টের দু’পাশে ফুটপাতের বাজার না থাকলেও কালেক্টরেট মার্কেটে এখন সমাগম বাড়ছে নিন্ম আয়ের মানুষের। সাধ্যের মধ্যে পরিবারের সবার নতুন পোশাকের শখ মেটাতে এ মার্কেটই ভরসা।
কালেক্টরেট মার্কেটের সামনে কথা হয় গৃহবধূ ফিরোজা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ফুটপাতে কোনো দোকান না থাকায় কালেক্টরেট মার্কেটসহ আশেপাশের মার্কেট থেকে কাপড় কিনতে হচ্ছে। তারপরও খুশি তিনি। কেননা এখানে অন্য বড় মার্কেটের চেয়ে দাম হাতের নাগালে রয়েছে।
বাবুল ইসলাম ও রবিউল নামে দুজন বিক্রয়কর্মী জানান, এ মার্কেটে ছোট-বড়, ছেলেমেয়ে সব বয়সীদের জামাকাপড় পাওয়া যায়। তবে ছোটদের জামাকাপড় বেশি বিক্রি হয়। এই মার্কেটে ছোটদের পাঞ্জাবি ২০০-৩০০ টাকায় আর শার্ট বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে।
কালেক্টরেট মার্কেটে ছেলেমেয়ের কাপড় কিনতে আসা রুকাইয়া নামে এক গৃহবধূ জানান, সংসারে আয় কম। তাই ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য তাদের একমাত্র ভরসা এইসব মার্কেট। ছেলেমেয়েদের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন। এখানে কম দামে অপেক্ষাকৃত ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে বলে এখানে আসা।
কালেক্টরেট মার্কেটের কয়েকজন দোকানি জানান, এসব দোকানে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৩৫০-৭০০ টাকা, টি-শার্ট ২৫০-৪০০ টাকা, মেয়েদের থ্রিপিস ৪৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, শাড়ি ৪৫০ থেকে দু’হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০-৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০-৫০০ টাকা, শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০-৪০০ টাকা। যা দামি মার্কেটগুলোতে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এইসব দোকানে বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই বললেন দোকানি আলমগীর হোসেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব মার্কেটগুলো আরও জমে উঠবে বলে জানান তিনি।
