Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 12:48 pm

যশোরে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে দুই গ্রামের যাতায়াত

প্রতিনিধি, যশোর: নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে বাঁশের সাঁকোটি। দুই পাশের হাতলেরও বেশিরভাগই ভেঙে গেছে। এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ভাঙা সাঁকো দিয়ে বুড়ি ভৈরব নদ পার হয়ে বা বিকল্প আট কিলোমিটার পথ ঘুরে আসা-যাওয়া করছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। জুতা হাতে নিয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত ভিজিয়ে এ সাঁকো পাড়ি দেয়ার সময় পা পিছলে নদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ।
এমন দৃশ্য যশোর সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বোলপুর গ্রামে। গ্রাম দুটির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি ভৈরব নদ। সম্প্রতি ভারী বর্ষণে নদের পানির স্রোতের তোড়ে গ্রাম দুটির ছাত্রছাত্রীদের পারাপারের একমাত্র সাঁকোটির এখন বেহাল অবস্থা।

এমন পরিস্থিতিতে ভাঙাচোরা ও পানিতে ডুবে থাকা সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ডাকাতিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিগত ১৬ বছর ধরে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও সেটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ছাত্রছাত্রীদের এ সীমাহীন দুর্ভোগ কাটছেই না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, ২০১৮ সালে সাবেক সংসদ সদস্য কাজি নাবিল আহমেদ এ সাঁকো নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু এমপির পিএস আবু মোসা মধু ও কাশিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইনতাজ আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ হস্তান্তর না করে নিজেদের মতো দায়সারাভাবে সাঁকো মেরামত করে। সাঁকো মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে এ সংসদ সদস্যসহ তার অনুসারী নেতারা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে সাঁকোটি নির্মাণ করি। কিন্তু এ বছর প্রবল বৃষ্টিতে পানির স্রোতে ও কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি দ্রুত ভেঙে যায়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বোলপুর গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক কামরুল আহসান বলেন, দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৬ বছর সরকারিভাবে সেতু নির্মাণ না হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করতে হয় শিক্ষার্থীদের। যদি সাঁকো পার না হয়; তাহলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে আসতে হয়, যা খুবই কষ্টকর। সাঁকো পার হয়ে আসার সময় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটে। গতকালও একজন পড়ে গিয়েছিল। আমরা দ্রুত এসে তাকে উদ্ধার করি।

ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার রুমি জানায়, সাঁকোটি যাওয়া আসার জন্য অনুপযোগী। যে কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। এ রকম অবস্থা আমার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীর। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতাম। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম ও তৌফিক জানায়, অনেক সময় স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে জামা-কাপড় ও বই-খাতা ভিজে যায়। শামুকে পা কেটে যায়। এভাবে চলাচল করতে না পেরে আমার অনেক বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। তারা দূরে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আর এখন সাঁকোর অবস্থা আরও খারাপ। এ ভাঙাচোরা সাঁকো দিয়ে পার হতে গেলে কোমর পর্যন্ত পানিতে ভিজে পার হতে হয়।

এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমাকে এখনও কেউ কিছু জানায়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার কাছে একটি লিখিত আবেদন নিয়ে এলে আমি তাৎক্ষণিক একটা সমাধানের ব্যবস্থা নেব।