যশোরে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: পবিত্র মাহে রমজান শুরুর এক মাস আগে অস্থির যশোরের নিত্যপণ্যের বাজার। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দাম বেড়েছে লবণ, চিনি, পোলাও চাল, মসলা, মাছ, সবজিসহ আরও কিছু অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের।

মুরগি ও ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ও অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে মুরগি ও ডিমের বাজারে। রমজান আসার এক মাস আগে বাজারদর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এজন্য তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন।

গতকাল সোমবার যশোরের বড়বাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। তবে এরই মধ্যে বড় ব্যবধানে দাম বেড়েছে সব ধরনের ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের। প্রতি কেজি মুরগিতে বেড়েছে ৭০ থেকে ১২০ টাকা। ডিমের হালিতে বেড়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি পোলট্রি মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হয় ২৩০ টাকায়। ২৫০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা এবং ২৫০ টাকার লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা ডিমের বাজারে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ টাকা ৫০ পয়সার প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা থেকে সাড়ে ১২ টাকায়।

ব্রয়লার মুরগির খুচরা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ও লিটন হোসেন বলেন, মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও স্বস্তিতে নেই। দাম বাড়ায় বেচাকেনা কমে গেছে। আগে যারা দুটি থেকে তিনটি মুরগি একসঙ্গে কিনতেন, তারা এখন একটি কিনছেন। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজার কমিয়ে দিচ্ছেন তারা।

একই কথা বলেন, পাশের জয় স্টোরের মালিক জয় সাহা। তিনি বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারাও হিসেব করে কেনাকাটা করছেন। আগে যারা দুই থেকে তিন হালি ডিম কিনতেন, তারা এখন এক হালি ডিম কিনছেন। এ পরিস্থিতিতে কেনাকাটাও কম হচ্ছে।

হঠাৎ কেন মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লÑএমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্রয়লার মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে খামারিরা তাদের বলেছেন। এ কারণে মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে তারা আভাস দেন।

ব্রয়লার মুরগির ও ডিমের পাশাপাশি অন্যসব পণ্যের দামও হু-হু করে বাড়ছে। কাঁচা মরিচের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ১৪০ টাকার প্যাকেটজাত পোলাও চালের কেজি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়। ৩৫ টাকা কেজি দরের লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। রমজানের অন্যতম নিত্যপণ্য ছোলার দাম ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। একই পরিস্থিতি সবজি ও মাছের বাজারে। সব ধরনের মাছের কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দাম বেড়ে চলছে। এ পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা। সাজেদুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, মাছ, মাংস ও ডিম থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। প্রতিবছর রমজান আসার এক মাস আগে এভাবে দাম বাড়ানো রীতির ধারবাহিকতায় এবারও বাড়ানো হচ্ছে বলে তার দাবি।

বড়বাজারে আকরামুল ইসলাম নামে আরেকজন ক্রেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাজারের এ অরাজকতা দেখার কেউ নেই। সংসার চালাতে বাজার খরচেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।

এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, রমজানকে সামনে রেখে বাজার যাতে অস্থির হয়ে না ওঠে, সে বিষয়ে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। বাজারে মুরগি ও ডিমসহ কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খামার পর্যায়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রমজানে কোনো সিন্ডিকেট যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।