Print Date & Time : 25 July 2025 Friday 8:38 am

যশোরে ব্যর্থ হতে চলেছে সৌদি খেজুর চাষের সরকারি প্রকল্প

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরে ব্যর্থ হতে চলেছে সরকারি উদ্যোগে সৌদি খেজুর চাষের প্রকল্প। ২০১৬ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরকারিভাবে প্রথম সৌদি আরব থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত উন্নত জাতের খেজুর কলম আমদানি করে দেশের বিভিন্ন জেলার হর্টিকালচার সেন্টারগুলোয় খেজুরের বাগান সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় সৌদি খেজুর চারা। দীর্ঘ এ সময়ে খেজুর গাছে কোনো পরাগায়ণ না হওয়ায় ব্যর্থ হতে চলেছে এ প্রকল্প। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। শিগগির সফলতা মিলবে বলে আশা করছেন তারা।

বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশালসহ সারাদেশে কম-বেশি খেজুর চাষ করা হয়। তবে দেশি জাতের খেজুর মূলত রস ও গুড় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের গাছে যে পরিমাণ ফল ধরে, তা উন্নতমানের নয়। তাই দেশের আবহাওয়ায় সৌদি খেজুর চাষ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন আগ্রহী কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সীমিত আকারে সৌদি খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন। তবে তারা কেবল বীজ থেকে তৈরি বাগান করায় তাতে জাতের গুণাগুণ রক্ষা না হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে সরাসরি সৌদি আরব থেকে টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারা এনে খেজুরবাগান সৃজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কৃষি বিভাগের পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যশোরের খয়েরতলা হর্টিকালচার সেন্টারে শতাধিক সৌদি খেজুর চারা রোপণ করা হয়। গাছগুলো গত পাঁচ বছরের নিবিড় পরিচর্যায় বেশ সতেজ হলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে পরাগায়ণের। মাঝেমধ্যে গাছে ফুল এলেও পরাগায়ণের অভাবে আজও ফল দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, এখানে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সৌদি খেজুর গাছ গড়ে তোলা হলেও তা পরাগায়ণের সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সফলতা আসেনি। গত বছর গাজীপুর থেকে বিশেষজ্ঞরা পরাগায়ণের চেষ্টা করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। তবে কেন পরাগায়ণ হচ্ছে না, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের দেশের আবহাওয়ার বিস্তর ফারাক থাকায় এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া যে খেজুর চাষের জন্য উপযোগী, তার প্রমাণ দেশি খেজুর গাছ। বিশেষ করে যশোরের মাটি খেজুর চাষের জন্য বিখ্যাত। যুগ যুগ ধরে এখানে খেজুর গুড় উৎপাদিত হয়ে আসছে। এজন্য আশা করা হচ্ছিল, এ জেলায় সৌদি খেজুর গাছ চাষ সফল হবে। কিন্তু গাছে কোনো ফুল বা পরাগায়ণ না হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে চাষি ও কৃষি বিভাগ।

চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক হযরত আলী বলেন, ইটের ভাটায় জ্বালানি কাঠ হিসেবে অনেক আগে থেকে যশোর অঞ্চলে খেজুর গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও গুড়। একসময় খেজুর গাছ ছাড়া কোনো গ্রামই কল্পনা করা যেত না। অথচ এখন খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় সৌদি খেজুর গাছ সৃজনের এ উদ্যোগ যশোরের কৃষকদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছিল।

একই কথা বলেন রফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক। তিনি বলেন, সারা বছরই কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়। এর আগে ভিয়েতনামের নারকেল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছিল। অনেক কৃষক উচ্চ দামে ভিয়েতনামের নারকেলের চারা লাগিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গায় এখনও নারকেল গাছে ফল আসেনি। কোথাও ফল এলেও তা অল্পসংখ্যক এবং আকৃতিতে ছোট। সৌদি খেজুরের বিষয়েও একই অবস্থা। পুষ্টিচাহিদা পূরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে সরকারি উদ্যোগে সৌদি খেজুর গাছ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব প্রকল্প হতে নিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

হর্টিকালচার সেন্টারের সদ্যবিদায়ী উপপরিচালক বিনয় কুমার সাহা বলেন, আশা করছি কেন পরাগায়ণ হচ্ছে না, তার সমাধান অচিরে পাওয়া যাবে। যশোরের মাটি খেজুর চাষের জন্য উপযুক্ত।