প্রতিনিধি, যশোর: যশোরাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় এ বছর গবাদিপশুর দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। অন্যদিকে, মানুষের আয় না বাড়লেও সংসার খরচ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হওয়ায় কোরবানির ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষের সক্ষমতা কমায় ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই এ বছর কোরবানি দিতে পারছেন না। ফলে এ বছর যশোরাঞ্চলে কোরবানি পশু বিক্রির কম হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে মূলত বাংলাদেশে পশুর দাম বাড়তে থাকে। ওই বছরে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৭৮০ টাকা। অথচ এখন সেই গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে আর খাসির মাংস ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কারণে কোরবানিতে ভাগেরও দাম বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ। এ পরিস্থিতিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ইচ্ছা থাকলেও পশু কোরবানি দিতে পারছেন না।
জেলার বাঘারপাড়া এলাকার জামদিয়ার আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, তার জানা বোঝার পর থেকে তাদের পরিবারে প্রতি বছরই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর ইচ্ছা থাকলেও কোরবানি দিতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, আগে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা হলেই কোরবানির একটি ভাগ পাওয়া যেত। এখন ২০-৩০ হাজার টাকার কম হচ্ছে না। তারপরও সাত ভাগের কোনো দল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমার সংসার চালাতে শোচনীয় পরিস্থিতি চলছে।
একই কথা বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক। তিনি বলেন, আল্লাহ সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অর্থনৈতিক কারণে অনেকে পেরে উঠছে না। আমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তিনি বলেন, আগে বাজারে গেলে ১০-১৫ হাজার টাকায় একটা ছাগল পাওয়া যেত। এখন ২৫-৩০ হাজার টাকার নিচে কোরবানির জন্য ছাগল পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে সাত ভাগের কোরবানিতে অংশ নিতে গেলেও ২০-৩০ হাজার টাকা লাগছে। এ অবস্থায় কী করব সেই চিন্তা করছেন বলে তিনি জানান।
বাঘারপাড়ার চাড়াভিটা হাটের পশু ব্যবসায়ী উকিল গাজী বলেন, খাদ্যে ও শ্রমিকের মূল্যে বৃদ্ধির কারণে এ বছর গরু ও ছাগলের দাম বেড়েছে। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের গরু কিনতে গেলে লাখ টাকার ওপরে যেতে হচ্ছে। যে কারণে অনেক নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষ এ বছর কোরবানির পশু কিনছেন না বলে তিনি জনান। তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা অনেক বেশি। তবে কেনকাটা সেই রকম হচ্ছে না।
রোববার যশোর রাজারহাটের গরু ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বলেন, হাটে ক্রেতারা দাম শুনে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বেচা-বিক্রি তেমন একটা হচ্ছে না। তাছাড়া পশুখাদ্য ও শ্রমিকের দাম বাড়ায় গরু ও ছাগলের দাম অনেক বেড়েছে।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৯ হাজার ১৩১ জন খামারির খামারে মোট ৩১ হাজার ২১টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চৌগাছায় দুই হাজার ৪৮৩টি খামারে গরু রয়েছে ৮ হাজার ৯৭৫টি। সবচেয়ে কম অভয়নগরে ৫৯৩টি খামারে গরুর সংখ্যা এক হাজার ৫৭৪টি। এছাড়া যশোর সদর উপজেলায় এক হাজার ৪১টি খামারে রয়েছে তিন হাজার ৪৪৪টি, মণিরামপুরে দুই হাজার ৯টি খামারে চার হাজার ৯৬৪, ঝিকরগাছায় ৮৮১টি খামারে তিন হাজার ৭৪৭, শার্শায় ৯৩৮টি খামারে দুই হাজার ৯১০, কেশবপুরে ৫৪৩টি খামারে তিন হাজার ৪৬২ এবং বাঘারপাড়ায় ৬৪৩টি খামারে গরু রয়েছে মোট এক হাজার ৯৪৫টি। জেলায় কোরবানিতে গরুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৯ হাজার। সে হিসাব অনুযায়ী, যশোরে চাহিদার তুলনায় দুই হাজারের বেশি গরু রয়েছে। এর বাইরে ছাগল রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, শেষ সময়ে জেলার পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা বেড়ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সার্বিক সহযোগিতায় প্রাণিসম্পদক অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।