যশোর অঞ্চলে পাটের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ‘মানসম্মত বীজের অভাব ও সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতের পাট না বেড়ে ডালপালা গজাচ্ছে। অন্যান্য বছরে পাটের বীজ বপনের পর এ সময়ের মধ্যে পাট প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হয়। অথচ পাট গাছ না বেড়ে ডালপালা ছেড়ে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ফুল গজাচ্ছে। এ বছর পাটের ফলনও খুব খারাপ।’ নিশ্চিত ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে এভাবেই বলেছিলেন যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার পাটচাষি আমজাদ হোসেন।
পাটচাষে এবছর এমন পরিস্থিতি শুধু আমজাদ হোসেনের নয়। একই ধরনের অবস্থা যশোরের অনেক পাটচাষির। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার যশোর অঞ্চলে পাটের ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে চরম লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা।
যশোর জেলা কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ধান আবাদে লোকসানের পর কৃষক পাটসহ সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। যে কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাট আবাদ হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যশোর জেলায় ১৮ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। সেখানে চলতি ২০১৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কিন্তু পাট চাষের মাঝামাঝি সময়ে এসে ক্ষেতের পাট না বেড়ে ডালপালা বিস্তার ও ফুল ফুটে যাওয়ায় কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
যশোর জেলার অধিকাংশ এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাট বপনের পর বর্তমান সময়ে পাটগাছ চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হওয়ার কথা সেখানে পাটগাছ তিন থেকে চার ফুট লম্বা হয়েই ডালপালা ছেড়ে দিচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও গাছে ফুল ফুটে গেছে। এ অবস্থায় এসব পাট না বাড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার আমজাদ হোসেনের মতো একই কথা বলেন, লেবুতলা এলাকার চাষি আজিবর রহমান। তিনি বলেন, গত বছরের পাটের দাম কিছুটা ভালো ছিল। তাছাড়া ধান আবাদে লাভ না থাকায় পাট চাষে আমরা আগ্রহী হয়েছিলাম। তবে এখন ক্ষেতের পাটের যে অবস্থা দেখছি তাতে কাক্সিক্ষত ফলন পাব বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, মানসম্মত পাট না হলে কোনো ব্যবসায়ী পাট কিনতে চান না। কিন্তু বর্তমান ক্ষেতে যে পাট দেখা যাচ্ছে তা বাড়ছে না। কী কারণে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এ পাট বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারব না সেটা নিশ্চিত।
সাধারণ মহলের আশঙ্কা, ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে পাট আবাদে বিপর্যয় ঘটলে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, আবহাওয়াজনিত কারণে বা পাট বীজের সমস্যার কারণে ক্ষেতের এ পরিস্থিতি হতে পারে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, পাটের এ সমস্যার বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। আমাদের মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন এবং কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি বীজের সমস্যার পাশাপাশি আবহাওয়াজনিত কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পাট চাষের ভরা মৌসুমে কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। সামনে ভারি বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতি কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।