Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 12:37 pm

যশোর শহরে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার

প্রতিনিধি, যশোর: যশোর শহরে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো এলপি গ্যাস বিক্রির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। লাইসেন্স না নিয়েই মুদি দোকান, সাইকেল গ্যারেজ, পানের দোকান, তুষ-কাঠের দোকান, ক্রোকারিজ, রড-সিমেন্টের দোকান, ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকান ও সেলুনসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানে অবৈধভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। অনভিজ্ঞ ও লাইসেন্সবিহীন এসব গ্যাসের দোকানের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপক আইন, ২০০৩’-এর নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। দাহ্য পদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রেও ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।

সরকারি বিধি মোতাবেক, গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল ও মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল বিস্ফোরক দ্রব্য বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না। কোনো আবাসিক এলাকায় দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না, এমনকি জনবহুল এলাকাতেও যাবে না।

জানা গেছে, এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যশোর শহরের যত্রতত্র বিক্রি করা হচ্ছে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ এলপি গ্যাস। আবাসিক এলাকার অলিগলিকে মুদি কিংবা অন্য দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। শহরের ব্যস্ততম সড়কের পাশে জনবহুল এলাকাতেও গড়ে তোলা হয়েছে গ্যাস বিক্রির প্রতিষ্ঠান। যশোর শহরের আরএন রোড, শহীদ মশিয়ূর রহমান সড়ক, মুজিব সড়ক, রাজা বরদাকান্ত সড়ক, জেল রোডসহ অন্যান্য সড়কজুড়েই গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, দোকানের ভেতরে যেমন গ্যাসের সিলিন্ডার মজুত করে রাখা হয়েছে, তেমনি সড়কের জায়গা দখল করে সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কারবালা রোডের সরকারি মহিলা কলেজের কাছে এবং উপশহর মহিলা কলেজসংলগ্ন আবাসিক এলাকাতেও সিলিন্ডারভর্তি এলপি গ্যাস মজুত করে রাখা হয়েছে। রেলবাজার, বেজপাড়া তালতলা বাজার, ধর্মতলা বাজার, ঘোপ বেলতলা বৌ-বাজারসহ অন্যান্য বাজারগুলোয় গড়ে উঠেছে গ্যাস বিক্রির প্রতিষ্ঠান। যশোর শহরের পাড়া-মহল্লার দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস। 

অনেক স্থানে দেখা গেছে, মুদি দোকান ও মোবাইল রিচার্জের দোকানে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। মুনাফার লোভে যে যেমন পারছে গ্যাস বিক্রি করছে, মানছে না কোনো নিয়মনীতি। এভাবে যত্রতত্র গ্যাস বিক্রির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা জানান, ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারা দিনে দু-একটা সিলিন্ডার বিক্রি করি। এ আইন সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে এসে বিক্রি করি। তাছাড়া ডিলারদের প্রতিনিধি প্রতিদিন ছোট পিকআপে করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানগুলোয় সিলিন্ডার সরবরাহ করে থাকে।’

এ বিষয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা যততত্র গ্যাস বিক্রি না করার জন্য বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করি। নিয়মনীতি না মেনে গ্যাস বিক্রি করলে তাদের লাইসেন্স প্রদানে নিরুৎসাহিত করি। অনেকের লাইসেন্স পর্যন্ত নবায়ন করা হয় না। যত্রতত্র গ্যাস বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’