Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 7:40 pm

যশোর-৩ আসন ৮ প্রার্থীর ৫ জনকেইচেনেন না ভোটাররা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ক’দিন পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে যশোর-৩ সদর আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। এই আট প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৫ জন প্রার্থীকে আসনটির অধিকাংশ ভোটাররাই চেনেন না। সরকারের পরিকল্পনায় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশল হিসেবে অখ্যাত কিছু সংগঠনের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলেও ভোটারদের কাছে তাদের ন্যূনতম কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যে কারণে ভোটের মাঠেও এসব প্রার্থীর তৎপরতা চোখে মিলছে না। ভোটারদের দাবি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আলোচনায় না আসলেও ভোটারদের কাছে তারা ইতোমধ্যে হাসির খোরাক হিসেবে দেখা দিয়েছেন।

সংসদীয় আসনটিতে আট প্রার্থীর মধ্যে সরকার দল ও জোটের তিনজন প্রার্থীই মূলত ভোটের প্রচারণায় কিছুটা তৎপর। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু মোহিত কুমার নাথ ও আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম বাচ্চু। এই তিন প্রার্থী বাদে অন্য ৫ প্রার্থীকে নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ মানুষই চেনেন না।

আসনটিতে সুমন কুমার রায় (ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি) আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ঢাকা বারের একজন আইনজীবী হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। নির্বাচনী এলাকার চান্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুমন রায় দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন। ন্যাশনাল পিপলস্ পাটি মনোনয়ন নিয়ে জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে নির্বাচনে আসলেও ভোটারদের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোথাও তার প্রচার-প্রচারণাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে সুমন রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে তিনি এসে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

তৌহিদুজ্জামান নামে আরেক প্রার্থী তিনি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী হয়ে বটগাছ নিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যশোর সদরের ভায়না উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুজ্জামান ঢাকা মিরপুরের একটি কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। তার নিজ এলাকার আশপাশের গ্রামের লোকজনও তাকে তেমন চেনেন না। তবে তৌহিদুজ্জামান জানান, তিনি ঢাকায় থাকলেও এলাকায় যোগাযোগ রাখেন। বর্তমান তিনি ভোটের মাঠে আছেন বলে জানান। তবে নির্বাচনী এলাকায় কোথাও তার পোস্টার বা প্রচারণা লক্ষ করা যায়নি।

মো. মারুফ হাসান কাজল কুলা প্রতীক নিয়ে বিকল্পধারার মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যশোর শহরের নিরালা পট্টি এলাকার বাসিন্দা মারুফ হাসান কাজল মূলত একজন এজেন্সি মালিক। কাজল টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। তার পরিচিতি নিরালাপট্টি এলাকার গণ্ডির বাইরে নেই। তবে তিনি নিজেকে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন বলে জানান। নির্বাচনে তার পক্ষে পোস্টার, লিফলেট, প্রচারণা না থাকলেও তিনি নির্বাচনের মাঠে সরব আছেন বলে দাবি করেন।

যশোর-৩ আসনের তৃণমূল বিএনপির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কামরুজ্জামান নামে আরেকজন প্রার্থী। শহরের তিন নম্বর ঘোপ এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান ওই ওয়ার্ড থেকে দুই দফা পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চরম লজ্জাজনক ভোট পেয়ে পরাজিত হন। দলীয় প্রতীক সোনালি আঁশ নিয়ে ভোট করছেন। শহর থেকে শুরু করে নির্বাচনী এলাকায় কোথাও তার পোস্টার বা প্রচারণা নেই। অথচ কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপি হয়ে নির্বাচনে মাঠে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছেন তিনি। তবে কামরুজ্জামান বলছেন, নির্বাচনে তিনিসহ তার সমর্থকরা ভোটের মাঠে সরব আছেন।

আরেক প্রার্থী শেখ নুরুজ্জামান-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মনোনয়ন নিয়ে নোঙর প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মনিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়নের স্মরণপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুজ্জামান যশোর শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। মূলত তিনি কোচিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। খোদ যশোর শহরেই তার নেই কোনো পরিচিতি। সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছেন। তবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এই প্রার্থীর দাবি, তিনি মাঠে আছেন এবং ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন।

শহরের খড়কী বামনপাড়া এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, আসনটিতে ৮ জন প্রার্থী হলেও তারা চেনেন দুই-তিনজনকে। বাকিদের নাম আগে কখনও শোনেননি। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এমনিতে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। কেননা এটি একটি ডামি নির্বাচন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচন হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।