প্রতিনিধি, নরসিংদী: ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ রেলস্টেশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হিসেবে সকলের কাছেই সু-পরিচিত। বৃহত্তর জনগোষ্ঠির এলাকা হিসেবে পরিচিত আমিরগঞ্জ রেলস্টেশনটি দিয়ে আমিরগঞ্জ, চর-আড়ালিয়া, নিলক্ষা, মির্জানগর, আদিয়াবাদ, ডৌকারচর, হাইরমারা এবং চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের জনগনের রেল পথের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বৃহৎ জনগোষ্ঠির বিশাল একটি অংশ ঢাকা, বিমানবন্দর, টঙ্গী, গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এই স্টেশন দিয়ে দৈনিক প্রায় এক হাজার যাত্রী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্ট তারিখে আমিরগঞ্জ রেল স্টেশনের পশ্চিমের ২৪/এ, ২৪/বি এবং ২২/এবি লুপ লাইনের তিনটি সিগন্যাল লাইনের মোটর চুরি হয় এবং এর আগেও একই স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তের আরও তিনটি মোটর চুরির ঘটনা ঘটে।
স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেল সড়কের নরসিংদীর ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ, ঘোড়াশাল ও আমিরগঞ্জ রেলস্টেশনটি প্রায় দুই বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে।
চুরির ঘটনার আগে এই স্টেশনের মাস্টার পরিবর্তন করা নিয়ে দীর্ঘ দিন যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি ও পরিত্যক্ত ভূ-সম্পত্তি নিয়ে স্টেশন ও স্টেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে আসছে। এই বানিজ্য অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় আমিরগঞ্জ রেলস্টেশন সবার উপরে হওয়ায় এই স্টেশনটি সকলেরই নজরে, কিন্তু অবহেলিত। ২০২২ এর ১ আগস্ট প্রায় ৭/৮টি স্টেশনের মোটর চুরি হওয়ার পর শুধু আমিরগঞ্জ রেলস্টেশন ছাড়া বাকীগুলো মেরামত করা হয়েছে। মাস্টার নিয়োগ, মাস্টার ট্রেনিং, মাস্টার সংকট দেখিয়ে প্রায় ৮/৯টি ইউনিয়নের জনগন ও ট্রেন যাত্রীদের ভূগান্তির মধ্যে পতিত হয়েছে। স্টেশন মাস্টার ও সিগন্যাল মোটর না থাকায় বিগত দিনগুলোতে প্রায় ২০/২২ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রায় ২০/২৫ জন লোকও দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা গেছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছে। সিগন্যাল ও স্টেশন মাস্টারের অভাবে এই স্টেশনে যাত্রী বিরতি দেওয়া ট্রেনগুলো প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন লাইনে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে যাত্রীদের উঠানামা করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অসুস্থ, বৃদ্ধ যাত্রীগণ এই স্টেশন হতে ট্রেনে উঠতে পারেনা।
স্টেশন মাস্টারের অভাবে ট্রেনও খুব স্বল্প বিরতি দেয়। বহুসংখ্যক যাত্রী ট্রেনে উঠতে-নামতে গিয়ে আহত হয়েছে। স্টেশন মাস্টার না থাকায় ও লুপ লাইনে ট্রেন চলাচল না করায় বিপুল সংখ্যক লোক যত্রতত্র চলাচল এবং রেললাইনের উপর বিভিন্ন ধরণের পসরা বসিয়ে অবাধে ব্যবসা বাজিন্য করে যাচ্ছে। ফলে রেলের উপর বাজার তৈরী হয়ে গেছে। যত্রতত্র রেললাইনের উপর ময়লা ফেলা হচ্ছে। নষ্ট হয়ে গেছে রেললাইনের লোহা, জঙ্গলে ঢেকে গেছে রেললাইন। সম্প্রতি জনসাধারণের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ‘অতি দ্রুত স্টেশন মাস্টার নিয়োজিত করে সিগন্যাল ও অবৈধ স্থাপনা ও রেলের উপর ব্যবসা বন্ধের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা অতিব জরুরী। উদ্ধারকৃত রেলওয়ের সম্পত্তিতে বৈশি^ক জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নকল্পে রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে বৃক্ষরোপন ও জলাধার নির্মাণ করে স্টেশনটির গতি ফিরিয়ে আনা অপরিহায্য হয়ে পড়েছে। এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠির বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে স্টেশনের মস্টার নিয়োগ ও সিগন্যাল লাইনের মোটর সংযোজন করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মোঃ মুছা জানান, নরসিংদীর মধ্যে শুধু আমিরগঞ্জই নয়, রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৪০টি স্টেশনে স্টেশন মাস্টারের অভাবে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, অতি শিঘ্রই মাস্টার নিয়োগ এবং লোকবল সংকট দূর করেই স্টেশনগুলো চালু করা অতিব জরুরী।