নিজস্ব প্রতিবেদক: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদের আগে ও পরে ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে, তা মানতে নারাজ সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। তাদের দাবি, ওই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২৫৩টি, আর মৃত্যুর সংখ্যা ২৩৯টি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদে বাড়ি যাওয়া ও নগরে ফেরার সময়সীমা ১৫ দিন ধরলেও বিআরটিএ বলছে, ঈদযাত্রা সর্বোচ্চ হতে পারে ৯ দিন, এর বেশি নয়। বিআরটিএ এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে চিঠিও দিয়েছে। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও তালিকা চাওয়া হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন মূলত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত ১৭ এপ্রিল বিআরটিএতে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে কেবল গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করা পরিসংখ্যান প্রকাশ না করে সরেজমিনে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলেও জানানো হয় এই চিঠিতে।
সেখানে লেখা হয়, ‘সরেজমিনে যাচাই-বাছাই ছাড়া দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য একেক রকম হওয়ায় তা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে।’ বিআরটিএর দাবি, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনেক সময় ভুল হয়। কাজেই প্রতিবেদন তৈরির আগে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন যাচাই করা উচিত। যাত্রী কল্যাণ সমিতি অবশ্য বলছে, তারা যে তথ্য তুলে ধরেছে, সেটি কোনোভাবে বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। বরং সব দুর্ঘটনার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ও ম্তৃ্যুর সংখ্যাটি আসলে আরও বেশি।
কী বলেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি
প্রতি বছর ঈদের পর বাড়ি যাওয়া ও ফেরার পথে দুর্ঘটনার সংখ্যা, প্রাণহানির তথ্য এবং দুর্ঘটনার ধরন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। বরাবরই সংবাদমাধ্যমে আসা দুর্ঘটনার খবর সংকলিত করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গত ২ মে সংবাদ সম্মেলনে করে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, আর প্রাণহানি ২১ দশমিক ১ শতাংশ এবং আহত ৩৩ শতাংশ কম হয়েছে। সমিতি হিসাব করে দেখেছে, ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ৫৬৫ জন। সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪১টি, মৃত্যু হয় ৩৫৫ জনের। আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২০ জনে। এ সময় রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৭ জন নিহত ও ১২০ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ, নিহতের ৫১ শতাংশ এবং আহতের প্রায় ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত গরমসহ নানা কারণে’ এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মানুষ ঈদে যাতায়াত করেছে।
কেন মানছে না বিআরটিএ
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে নিহত এবং আহত যাত্রীর সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে ‘অতিরিক্ত’ দেখানো হয়েছে। এ কারণে ওই প্রতিবেদন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে দেয়া এক চিঠিতে সরকারি সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আবদুল আউয়াল লিখেছেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২২জন মানুষ নিহত হয়েছেন, যা ‘বাস্তবসম্মত নয়’। সরকারি সংস্থাটির দাবি, ১৫ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ২৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩৯ জন নিহত ও ৫১০ জন আহত হয়েছে। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে ৫১টি দুর্ঘটনা, ৮৯ জন নিহত ও আহত ৫৫ জন বেশি দেখানো হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ও যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘এটাই সঠিক।’
অবশ্য বিআরটিএ ঈদযাত্রাকে ১৫ দিন মানতে নারাজ। তাদের চিঠিতে বলা হয়, ‘ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি ছিল ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। বিআরটিএর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা ছিল ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এ কারণে ঈদযাত্রাকে সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিন বিবেচনা করা যায়।’ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসেবে অনুযায়ী এই ৯ দিনে সড়কে ১৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৬ জন নিহত এবং ২৫৮ জন আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয় চিঠিতে।