কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে রাজধানী ঢাকায় সাধারণ মানুষের আগমন দেশের অন্য শহরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তাই যানবাহন-যানজট বেশি। বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যানজটের শহরের তালিকায়ও ঢাকার নাম প্রথম দিকে থাকে বরাবরই। ঢাকার যানজট সমস্যা কতটা গুরুতর ও ক্ষতিকরÑতা উঠে এসেছে প্রকৌশল, স্থাপনা ও আবাসন-সংক্রান্ত প্রতিটি গবেষণায়।
রাজধানীতে প্রধান সমস্যা যানজট। যানজটের কারণে প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিটই বসে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। এতে অপচয় হচ্ছে প্রচুর সময় ও জ্বালানি। একই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। আর বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার চিকিৎসায় একজন মানুষকে বছরে চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘সবুজ নগরীর জন্য দূষণ হ্রাস’ শীর্ষক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব কথা জানানো হয়।
রাজধানীর প্রধান সমস্যা যানজট আর সেটি কয়েক বছর ধরেই। এতে প্রমাণ হয়, যানজট দূরীকরণে নেয়া ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। স্বীকার করতেই হবে উড়াল সেতু, মেট্রো রেল, এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হয়েছে যানজট কমানোর কথা বলে। কিন্তু এগুলোর সুফল আদৌ পাওয়া যাবে কি না; সে প্রশ্নও উঠছে।
ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাধিক্য যানজট বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তাই যানজট কমাতে সরকারের নেয়া সব পরিকল্পনায়ই ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখতে বলা হয়েছিল। উন্নত বিশ্বে নগরবাসীকে কেবল গণপরিবহনেই চলতে হয়। পাশাপাশি গণপরিবহন বাড়াতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি বলে নগরবাসীর দুর্ভোগও কমেনি।
উন্নত বিশ্বে ব্যক্তিগত গাড়ির পার্কিং স্পট থাকে শহরের বাইরে, আমাদের স্পটগুলো শহরের অভ্যন্তরে। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্ক, ফুটপাতের অবৈধ দখল, হকারদের সড়ক দখল, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। জরিমানার অঙ্ক বাড়ালে অবাধে গাড়ি পার্কিং কমবে।
পার্কিং স্পট বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যমান স্পট ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের কয়েকটি ফ্লাইওভারে যানজট কমায়নি, বরং বাড়িয়েছে। এর ফলে যানজটের স্থান বদল হয়েছে মাত্র। ফ্লাইওভারের নিচে যানজট নেই; কিন্তু এটি যেখানে গিয়ে সমতলে নেমেছে, সেখানে যানজট বেড়েছে। তাই ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে।
যানজটের সব ক্ষতি দৃশ্যমান নয়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যানজটে বসে থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয়। নানান রকম দুশ্চিন্তা ভর করে। এমন মানসিক চাপে নাগরিকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কে। নগরের সরকারি সংস্থাগুলোর পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় একেক সময় একেক সংস্থা সড়কের সংস্কার করে। ফলে যানজট হয়। সমন্বিত ব্যবস্থা নিলে দুঃসহ যানজট দূর করা সম্ভব।