শেয়ার বিজ ডেস্ক: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলছে। চলতি বছরের বিদায়ী অক্টোবরে দেশটির খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে বছর ভিত্তিতে ভোক্তামূল্য (সিপিআই) সূচক আগের মাসের তিন দশমিক এক শতাংশ থেকে বেড়ে চার দশমিক দুই শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১১ সাল থেকে গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে সম্প্রতি জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়। খবর: বিবিসি, গার্ডিয়ান।
স্থানীয় সময় গতকাল যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (ওএনএস) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহƒত তেল, গ্যাস, পুরোনো গাড়ি এবং খাদ্যপণ্যের দাম ভোক্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কর্মী সংকট এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিপর্যয়ের কারণে দেশটির সুপারশপগুলোতে অনেক তাক খালি পড়ে থাকে।
অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে দেশটির অনেক শহরে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া চালু পাম্পগুলোতে গ্যাসের জন্য কয়েক ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে জরুরি সেবা যেমন হাসপাতালের সেবা থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন অনেক রোগী।
ওএনএসের তথ্য বলছে, যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ব্যাংক অব ইংল্যান্ড) বার্ষিক মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের সীমা ছাড়িয়ে গত সেপ্টেম্বরেই রেকর্ড প্রায় দ্বিগুণ তিন শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, যে হারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তাতে আগামী বছরেই মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখন ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরেই মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ওএনএসর প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রান্ট ফিজনার বলেন, অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য, পুরোনো গাড়ি, জ্বালানি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গৃহস্থালির জ্বালানি বিল পর্যন্ত কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া শিল্পকারখানার উৎপাদিত পণ্য এবং কাঁচামালের দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি।
আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিক ইউকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডলাস বলেন, নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের সিপিআই সূচক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৪.৭ শতাংশ পৌঁছাতে পারে।এবং আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ পাইকারি মূল্য সূচক ৫.০ শতাংশে পৌঁছাবে।
ওএনএস তথ্য বলছে, অক্টোবরে বাসাবাড়ির গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গৃহস্থালির জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বেশি সিপিআই সূচক বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের গ্যাস বিল বেড়েছে ২৮.১ শতাংশ। যেখানে বিদ্যুতের দাম ১৮.৮ শতাংশ এবং পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ২৫.৪ থেকে ১৩৮.৬ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সর্বোচ্চ।
ওএনএস বলছে, বৈশ্বিক চিপ সংকটে নতুন গাড়ির উৎপাদন ধীরগতির হওয়ায় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় ক্রেতাদের। ফলে পুরোনো গাড়ির ব্যবহার বেড়েছে। বেড়েছে দামও। ফলে ব্যবহƒত এসব গাড়ির দাম গত এপ্রিল থেকে ২৭.৪ শতাংশ বেড়েছে; যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী তেল গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যক্তরাজ্যে দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া কম্পিউটার চিপ থেকে গাড়ির চিপসহ কাঁচামালের সরবরাহে ঘাটতি, কভিড মহামারিকালীন প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়ায় নাগরিক ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পলিসি ফোরাম ওপিসিডির মতে ব্রেক্সিট-পরবর্তী কর্মী সংকটেও দেশটির ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন, যা মূল্যস্ফীত বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।