Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 10:00 pm

যুক্তরাজ্যে ‘ফুড ব্যাংকের’ ওপর নির্ভর করছে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব দেশে নিত্যপণ্যসহ জ্বালানির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে বিশ্বের প্রায় সব ব্যাংক সুদহার বাড়াতে বাধ্য হয়েছে; যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাজ্যেও এ সংখ্যা কম নয়। দিন দিন  বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। এসব মানুষ বিশেষ করে ‘পেনশনভোগী’ ও শিক্ষকসহ নি¤œ আয়ের মানুষ এখন ফুড ব্যাংকের খাদ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটিতে খাদ্য ব্যাংক থেকে কম দামে খাদ্যপণ্য কেনার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। খবর: গার্ডিয়ান।

নতুন পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটেনে আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ খাদ্য ব্যাংকের ওপর নির্ভর করছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ‘ক্রমবর্ধমান’ পরিবারের সংখ্যা, পেনশনভোগী, এনএইচএস কর্মী এবং শিক্ষকসহ অনেক পরিবার জীবনযাত্রার এ সংকটময় পরিস্থিতিতে সাহায্য চায়। 

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফুড এইড নেটওয়ার্কের (ইফান) গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ৯০ শতাংশ ফুড ব্যাংক বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিÑএই দুই মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলানায় চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণায় অংশ নেয়া ১৫৪টি ফুড ব্যাংকের মধ্যে ৮৫টি জানিয়েছে, ‘খাদ্যের চাহিদা এভাবে বাড়লে, তাদের সমর্থন কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন অথবা সেবাগ্রহীতাদের দূরে ঠেলে দিতে হবে।’

যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুড ব্যাংক পরিচালনাকারী সংস্থা দ্য ট্রাসেল ট্রাস বলছে, গত বছরের এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর মাসে ১.৩ মিলিয়ন জরুরি খাদ্য বিতরণ করেছে তারা; যা আগের বছরের একই সময়েরে তুলনায় তিনগুণ বেশি এবং কভিড পূর্ব সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

গত সপ্তাহে ওএনএস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো সত্ত্বেও জীবনযাত্রার ব্যয় এখনও ক্রমবর্ধমান। দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৬.৭ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম এক বছর আগের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি।

গত নভেম্বর অফিস অব রেসপনসিবিলিটি বাজেট পূর্ভাবাস দিয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পারিবারিক আয় ৪.৩ শতাংশ কমে যাবে; যা ১৯৫৬ সাল থেকে সবচেয়ে বড় পতন।

গবেষণায় দেখে গেছে, যারা ফুড ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছেন তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। ফলে নি¤œ আয়ের মানুষগুলোই ফুড ব্যাংকের খাবারের ওপর নির্ভর করছেন।

গবেষণায় দেখে গেছে, এনএইচএস কর্মী, শিক্ষকসহ কর্মরত লোকদের কাছ থেকে রেকর্ড চাহিদা মেটাতে ফুড ব্যাংকগুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ৮০ শতাংশ লোক প্রথমবারের মতো ফুড ব্যাংক থেকে পণ্য সরবরাহ করছেন। যদিও বলা হচ্ছে, পেনশনভোগী এবং শিশুর পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইফানের সমন্বয়কারী সাবিনা গুডইউন বলেন, এটি স্পষ্ট যে, লোকেরা শীতকালে বেশি ঋণ নিয়ে অভাবে পড়ে গেছেন। এসব ঋণ এখন মানুষকে খাদ্যের কিনারাই ঠেলে দিচ্ছে। তিনি দাতব্য খাদ্য সহায়তার ওপর সরকারকে ‘অনৈতিক’ অভিযোগ প্রত্যাহার করে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো কোনো পথ নেই বলে মনে করেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয় ‘ফুড ব্যাংক বা খাদ্য ব্যাংক’ নামের দোকান। এখানে কম মূল্যে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধের খাবারের জন্য বিখ্যাত ফুড ব্যাংক। দেশটিতে কভিড-পরবর্তী সময়ে ফুড ব্যাংকের দিকে বেশি ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ।