শেয়ার বিজ ডেস্ক: জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নামিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ব্রিটিশ সরকার। সরবরাহ ঘাটতির কারণে গ্যাস সংকট বেড়েই চলছে দেশটিতে। এদিকে সরবরাহ কম থাকায় দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে গ্যাসের দাম সর্বকালের সেরা উচ্চতায় পৌঁছেছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও জ্বালানির দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ফলে গত কয়েকদিন সূচক হ্রাস পাচ্ছে। খবর: গার্ডিয়ান, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের গ্যাসের দাম দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটিশ পাইকারি গ্যাসের দাম প্রথমবারের মতো প্রতি থার্মে তিন পাউন্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটিশ রেফিনিটিভ তথ্য অনুযায়ী, আগের দিনের তুলনায় মঙ্গলবার ২৫ শতাংশ বেড়ে থার্মপ্রতি গেসের দাম ৩৫০ পাউন্ড উঠেছে; যা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি দাম।
এদিকে একই দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ের নেদারল্যান্ডসেও গ্যাসের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নভেম্বরে শীতের সময় দাম আরও বেড়ে যাবে।
ইউরোপিয়ান বেঞ্চমার্কে গত নভেম্বরে গ্যাসের দাম ঘণ্টায় প্রতি মেঘাওয়াট ২৫.৬০ থেকে ১৪৩.১০ ইউরো ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তা বেড়ে রেকর্ড ১৫৫.০০ ইউরো হয়েছে। এ বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যা দেখছি, এটি আশ্চর্যজনক; যা সম্পূর্ণ পাগলামি।
যুক্তরাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি গতকাল উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, আসন্ন ক্রিসমাসের সময় জ্বালানি হিসেবে তেল-গ্যাসের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে; যা গ্রাহকদের জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করবে।
দ্য ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ ভোক্তা মূল্যস্ফীতি রেকর্ড বৃদ্ধি পাবে। শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থাটি বলছে, ১৯৮২ সালে মূল্যস্ফীতির হিসাব রাখার পর থেকে আসন্ন তিন মান ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে; যা শিল্প কারখানাগুলোর জন্য ব্যাপক চাপ হয়ে যাবে। সংস্থাটি বলছে, এটি আরেকটি লক্ষণ যে, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে, যা পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় তীব্র করে তুলবে।
এদিকে রেটিং সংস্থা মুডি’স পূর্বাভাসে বলছে, পাইকারি বাজারে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি যুক্তরাজ্যের জ্বালানি সরবরাহকারীদের পতনের দিকে নিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে মুডি’সের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জুয়ান্না ফিক বলেন, যুক্তরাজ্যজুড়ে ১৭ লাখ গ্রহকের সেবাদানকারী শীর্ষ ৯টি কোম্পানি গত সেপ্টেম্বর থেকে সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। মুডি’সের ধারণা চলতি অক্টোর থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকবে কোম্পানিগুলো।
ইউরোপ অঞ্চলজুড়ে জ্বালানির তীব্র সংকট চলছে। শ্রমিক ও সরবরাহ সংকটে এ অঞ্চলের তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ সংকট আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরের নর্ডিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উৎসগুলোতে পানি মজুদ কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ইউরোপে গ্যাসের রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় মেঘাওয়াটপ্রতি ১১৭.৫০ ইউরো ছাড়িয়েছে; যা গত ছয় মাস আগের চেয়ে ১৮ ইউরো বেশি।
লকডাউন শিথিল এবং কয়লার ব্যবহার হ্রাস করায় চাহিদা বেড়ে ইউরোপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য এ অঞ্চলের নাগরিকরা জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। এরই মধ্যে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স এবং গ্রিসের সরকার পারিবারিক উচ্চ ব্যয় কমাতে ভর্তুকি দিতে সম্মত হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উজলা ভন ডার লেয়ন বলেন, নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র সন্ধানে অনেকে এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহের জন্য আলোচনা হয়েছে।
এক বছর আগের তুলনায় সেপ্টেম্বরে নর্ডিক অঞ্চলে বিদ্যুতের দাম অন্তত পাঁচগুণ বেড়েছে; যা বিদ্যুৎচালিত উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা, খনি, এমনকি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বেতন-বিলে আরও চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই ভোক্তা মূল্যস্ফীতি চূড়ায় উঠছে। ইতোমধ্যে জার্মানির মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে তিন দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।