তৌহিদুর রহমান: যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র ফ্রান্স এবং কানাডা। দেশ দুটির সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থও জড়িত। সারা বিশ্বে ছড়ি ঘোরাতে যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে থাকে, তার মধ্যে ফ্রান্স ও কানাডা শীর্ষে। সে দেশ দুটির শীর্ষ নেতা এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সমালোচক। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ নজিরবিহীনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টুইট যুদ্ধও করছেন! এমনকি বলা হচ্ছেÑদেশ দুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন তলানিতে। শুধু তা-ই নয়, জি-৭ ভুক্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর দেশটির এ অবস্থায় পৌঁছার পেছনে আসলে কারণ কী? অনেকেরই অভিমত, এর পেছনে সবচেয়ে বেশি দায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার দায়ী হওয়ার পেছনে কারণও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ক্ষমতায় আসার পরপরই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে নেওয়া ওবামা কেয়ার, অভিবাসন নীতিসহ আরও অনেক কিছু বাতিল করে দেওয়ার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প; যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জš§ দিয়েছে। এ-ছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, যৌন কেলেঙ্কারিসহ আরও অনেক বিষয়ে বিতর্কিত হয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এ সবকিছুকে ছাপিয়ে আরও অনেক বৈশ্বিক ইস্যুতে তার হস্তক্ষেপ মিত্র দেশগুলোকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শুরু বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্কারোপের মাধ্যমে। চীনের সঙ্গে ৩৭৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্কারোপ করেন। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থাও এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত শুধু চীনকে টার্গেট করে করা হলেও তাদের মিত্র দেশ কানাডা, মেক্সিকো, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও অনেক দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্কারোপ করেছে কয়েকটি দেশ। এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও কড়া সমালোচনা করেছেন এসব দেশের নেতারা। এ ধরনের সমালোচনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। চীনের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ পদক্ষেপ হলো আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি ডলারের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি। এতে বিশ্ব বাণিজ্যে উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়।
আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এ বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনার পর স্বাক্ষর হওয়া ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। অথচ তার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিতে থাকা অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি চীনও কড়া প্রতিবাদ জানায়। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ অনেক দেশের নেতা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরাসরি মন্তব্য করেন। তারপরও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থায় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে মিত্র দেশগুলোর নেতারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে তারা প্রকাশ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পিছপা হননি। এতে দীর্ঘদিনের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। পরমাণু চুক্তির ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হলেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর তা একেবারে তলানিতে পৌঁছায়।
এর মধ্যেই আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিল জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করা। সে সিদ্ধান্ত গত মাসে বাস্তবায়ন করেন। যার মাধ্যমে গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনের জনগণ প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সারা বিশ্ব থেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ চলাকালে ইসরাইলি বাহিনী গুলি চালালে একদিনেই অর্ধশতাধিক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। আর গত দুই মাসে সেখানে শতাধিক নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ বিপুল প্রাণহানির জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তকেই বহুলাংশে দায়ী করা হয়। অথচ তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেরই সমর্থন পাননি। বরং জাতিসংঘসহ সব পক্ষ থেকেই এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও নড়বড়ে হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ নিয়ে তুরস্কে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি’র বিশেষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে এ ইস্যুতে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ হিসেবে তুরস্ক ও পাকিস্তানের পরিচিতি রয়েছে। অথচ দেশ দুটির সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন তলানিতে। তুরস্কে গত বছরের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করা হয়। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করে তুরস্ক তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি হয়নি। এতে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। এ-ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে ‘প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ প্রত্যাহার করে নিলে তুরস্কের আকাশ প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়ে। এর সমাধান হিসেবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার এস-৪০০ কেনার চুক্তি করে তুরস্ক, যা যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যবস্থা ন্যাটো সামরিক জোটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় উল্লেখ করে তা না কেনার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে অত্যাধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তি এফ-৩৫ ফাইটার জেট তুরস্ককে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে সমর্থন জানিয়েছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানটি মধ্যপ্রাচ্যসহ এ অঞ্চলের আর কারও হাতে যাতে না যায়, সে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল। যদিও এস-৪০০ বিক্রিতে বাধা দেওয়া রাজনীতির চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের লোভনীয় অস্ত্রবাণিজ্যে পিছিয়ে পড়াই বেশি ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কও এস-৪০০ কেনার বিষয়ে তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান না দেওয়া হলে একই ধরনের রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তির এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমান কেনার হুশিয়ারি দিয়েছে তুরস্ক। এতে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি তো হয়েছেই, শীর্ষ নেতারাও জড়িয়ে পড়েছেন বাগ্যুদ্ধে। এ সুযোগটিই গ্রহণ করেছে রাশিয়া। তুরস্ককে এস-৪০০ কিনতে যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তবে তুরস্ককে এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। এ-ছাড়া তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলায়মান সোয়লু বলেছেন, নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষার অধিকার তুরস্কের আছে এবং এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই।
এছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পর আরেক মিত্র দেশ পাকিস্তানের ওপর খড়গহস্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়া সীমিত করেছেন তিনি। এছাড়া নানা ইস্যুতে দেশটিকে হুমকি-ধমকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়ে এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে পাকিস্তান। এ-ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর বাগ্যুদ্ধে জড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে খাদ তৈরি করেছে। অস্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম অংশীদার দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আভির্ভূত হওয়া চীন!
ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কতটা অবনতি হয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে চলতি মাসেই কানাডায় অনুষ্ঠিত বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির জোট জি-৭ দেশগুলোর বৈঠক চলাকালে। এ বৈঠক শুরুর আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে টুইট যুদ্ধে নামেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী। আর বৈঠক শুরুর পর শুল্কারোপসহ নানা ইস্যুতে এসব দেশের কড়া সমালোচনার মুখে এক ধরনের কোণঠাসা হয়ে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্মেলনে ট্রাম্পের এ পরিস্থিতিতে পড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবেই সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্পের টুইট বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। এ-সময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বারবার প্রতারণা করার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হবে না, পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ থেকেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কতটা তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। এ সম্মেলনেই জি-৭ জোটে যুক্তরাষ্ট্রের চিরবৈরী দেশ রাশিয়াকে আবারও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প!
এসব ঘটনা ভালোভাবে লক্ষ করলে যেটা দেখা যায়Ñদেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পেছনে এককথায় বলতে গেলে এককভাবে দায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আর কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য। তার কর্মকাণ্ডে মিত্র দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গেছে। এছাড়া চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির সঙ্গে দেশটির ঐতিহাসিকভাবেই দূরত্ব তো রয়েছেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন বিশ্ব রাজনীতিতে এক ধরনের কোণঠাসা বললেও ভুল হবে না। যদিও এ সময় ইসরাইল ও ভারতের মতো কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বেশ খানিকটা উন্নতি করেছে। তারপরও সেগুলোকে খুব বেশি টেকসই বলা চলে না। কারণ ভারতের সামরিক বাহিনী এখনও রাশিয়ার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। যে এস-৪০০ নিয়ে এত বিতর্ক, সে ব্যবস্থার অন্যতম ক্রেতা ভারত। এছাড়া আরও অন্তত ২০০ সামরিক হেলিকপ্টারসহ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ান অস্ত্র কেনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এদিকে নানা ইস্যুতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই ইসরাইলের সম্পর্ক ভালো নয়। সম্প্রতি গাজায় বিক্ষোভ চলাকালে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যার কারণে আরও বেশি সমালোচনার মুখে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে পরিচিত ইসরাইল।
এতকিছুর মধ্যেও উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত করার বিষয়টি বড় সাফল্য হিসেবে মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার যে অটুট সম্পর্ক রয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফলে এটা ট্রাম্পের জন্য খুব একটা ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। বরং বাণিজ্য বিতর্ক, ইরানের পরমাণু চুক্তি, এস-৪০০ ইস্যুর মতো ইস্যুগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাবে বলেই মনে হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো ট্রাম্পের অবস্থান যেমন আরও নড়বড়ে করবে, যুক্তরাষ্ট্রও তার দীর্ঘদিনের মিত্র দেশগুলো থেকে আরও দূরে সরে যাবে। এ পরিস্থিতি আরও কতদূর গড়ায়Ñতা নির্ভর করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগামী দিনের কর্মকাণ্ডের ওপর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেপথ্য শক্তি বা ডিপ স্টেটের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা নেপথ্য শক্তিগুলোর ভূমিকার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে হয়।
গণমাধ্যমকর্মী
touhiddu.rahman1Ñgmail.com