জাকারিয়া পলাশ: বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গত এক বছরে এখানকার ব্যবসা পরিবেশের ভালো অগ্রগতি হয়নি। বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য নানা রকমের বাধা বিরাজ করছে এখানে। এমনকি বিদেশি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ার কাজও স্বচ্ছভাবে করা হয় না।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে গত মার্চে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ট্রেড এস্টিমেশন’ (এনটিই)-এর প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর এ বার্ষিক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর থেকে। প্রায় ৭০টি দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে দেশভিত্তিক প্রতিবেদন দেওয়া হয় এতে। গত বছর (২০১৬ সালে) এ প্রতিবেদনে ৬৩টি দেশের কথা প্রাধান্য পেয়েছিল। গত বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এবারও বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে দাখিল করা এ প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক বাণিজ্যের অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০ কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রফতানি হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার। বাংলাদেশে দেশটির সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি (৫৮৯ মিলিয়ন) ডলার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের এ অবস্থা আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানির ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম আইনি ব্যবস্থা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশের আমদানি নীতি, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাসহ মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় বাংলাদেশের দুর্বলতার কথা তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দেশটির দেওয়া এনটিই প্রতিবেদনেও ওইসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে কোনো অগ্রগতির কথা দেখা যায়নি। বরং প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের গত বছরের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আরও কিছু নতুন বিষয় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসার অবস্থার উন্নতি সন্তোষজনক নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সের মতো কমার্শিয়াল খাতে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমূলক বিধি রয়েছে বাংলাদেশে। লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায়ও অসচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। তবে ২০১৬ সালে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিডা ওয়ান-স্টপ সার্ভিস দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা ছাড়াও অদক্ষ আমলাতন্ত্র, কর্মকর্তাদের যত্রতত্র বদলি ও স্বচ্ছতার অভাব বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বাধা বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগের লভ্যাংশ ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা সামান্য অর্থও বাইরে ছাড় করতে দেন না অর্থপাচারের ভয়ে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একতরফাভাবে নির্দিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানিকে টার্গেট করে পুরোনো শুল্ক-মামলা হাজির করছে বলে অভিযোগ করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া জমি নিয়ে বিরোধ ও জমি বিক্রির পর ফের তার মালিকানা দাবি করাসহ নানা সমস্যা উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করা হয় দেশটির প্রতিবেদনে।
অবশ্য এ প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। দেশের ব্যবসা পরিবেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, ‘আমাদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ শিগগিরই চালু হবে। আমরা বিশ্বের ২৩টি দেশের ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে তাদের সমস্যা ও ব্যর্থতাগুলো জানার চেষ্টা করেছি। সে অভিজ্ঞতা নিয়েই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়েই কীভাবে বিনিয়োগে সহজ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। এছাড়া আইনি সংস্কারেরও চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ ভিসা ব্যবস্থা করার জন্য আমি সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। কাজেই বিনিয়োগের পরিবেশের দ্রুতই আমরা অগ্রগতি দেখতে পাব। এজন্য বিডা কাজ করছে।’