Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 4:50 am

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতায় এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহনে অস্থিরতা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্বালানি তেল ক্রয় ও পরিবহনের খরচ হঠাৎ করে অন্তত ২৮ শতাংশ বেড়েছে। চীনা জাহাজ কোম্পানি কসকোর কয়েকটি জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর হঠাৎ করেই তেলের বাজারে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইরানের অশোধিত তেল পরিবহনের অভিযোগে জাহাজগুলোর ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর: রয়টার্স।
গত বছরের নভেম্বরে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই পদক্ষেপকে দেশটির নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কসকোর অন্তত দুই ইউনিট জাহাজ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের তেল পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের এই হঠাৎ পদক্ষেপের ফলে অন্তত ৫০টি সুপার ট্যাংকার পরিচালনাকারী কোম্পানিটির ওপর বড় প্রভাব পড়েছে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় চীনা কোম্পানি কসকোর জাহাজে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিকল্প পদক্ষেপ নিচ্ছে তেল ক্রেতারা। এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এশিয়া অঞ্চলে তেল পরিবহনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কসকোর মুখপাত্র ঝাং ঝেং বলেছেন, কোম্পানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন কঠোর অবস্থানের পর নিজেদের জ্বালানি তেলের সরবরাহ সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে এশিয়া অঞ্চলের তেল ক্রয়কারী সংস্থাগুলো। ফলে তারা তেল পরিবহনকারী সুপারট্যাংকার ভাড়া নেওয়া শুরু করেছে। শিপিং শিল্প সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অক্টোবরে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য এ ধরনের ভাড়ার পরিমাণ ১৯ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এশিয়ার ক্রেতাগুলোর এ ধরনের পদক্ষেপে জাহাজপ্রতি খরচ অন্তত ছয় লাখ ডলার বেড়েছে বলে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি অশোধিত তেল আমদানিকারক জানিয়েছে। এছাড়া ভারতের পশ্চিম উপকূলে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরিবহনের খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ রাতারাতি দুটি সুপারট্যাংকার ভাড়া নেওয়ার পর এ পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে কসকোর জাহাজগুলোর ওপর কী ধরনের বা কতটা বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিল্প সূত্র জানিয়েছে, কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কসকোর জাহাজ ভাড়া নেওয়া বন্ধ রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইওয়ানের তেল শোধনকারী এবং এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় তেল ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফরমোসা পেট্রোকেমিক্যালের মুখপাত্র কি লিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে শঙ্কিত ক্রেতারা কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই নিষেধাজ্ঞা কী পরিমাণ বিস্তৃত হবে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জাহাজ ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়ে গেছে। সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলা খারাপ খবর হয়ে এসেছিল। এখন কসকোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরও একটি ধাক্কা হয়ে এসেছে। তবে মালিকদের জন্য এটি ভালো খবর এবং তাদের আয়ের সুযোগ বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।