মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্তর্মুখী নীতি গ্রহণের পর অনেকের মনে ভয় তৈরি হয়েছিল—যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত সেই ভয় সত্যি হয়নি। মার্কিন নেতৃত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো এখনো অক্ষত থাকায় স্বস্তি পেয়েছেন বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা।
শনিবার ওয়াশিংটনে পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠক শেষ হয়েছে। এই বৈঠকে বাণিজ্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়েও কথা হয়েছে।
তবে ট্রাম্পের নানা মন্তব্য ও পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে কিছু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ও এর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—মার্কিন ডলার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কি আগের মতোই থাকবে?
ভাগ্যক্রমে, ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত ফেডের চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের হুমকি থেকে সরে এসেছেন। এতে করে ডলারের প্রতি বিশ্বব্যাপী আস্থা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। কারণ, ফেডের স্বাধীনতা বিশ্বজুড়ে মার্কিন ডলারের ওপর আস্থা গড়ে তুলেছে।
তবে শুধু ফেড নয়, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এসব আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এখনো মার্কিন নেতৃত্ব ছাড়া বিশ্বব্যবস্থা চলবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো মুদ্রা কিছুটা জনপ্রিয়তা পেলেও ডলারের বিকল্প হতে পারেনি। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইউরোতে রাখা হয়, কিন্তু তা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নয়।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ঋণে জর্জরিত। জার্মানি ছাড়া বড় কোনো অর্থনৈতিক শক্তি নেই, যেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ মনে হয়। অন্যদিকে, জাপান একটি ছোট অর্থনীতি এবং চীনের মুদ্রা এখনো কড়াভাবে নিয়ন্ত্রিত। ফলে ডলারের বিকল্প হিসেবে এখনো কোনো শক্ত মুদ্রা দাঁড়ায়নি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বড় অংশের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই দুই প্রতিষ্ঠান চলবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। যদিও অনেকে বলছেন, পুরো বিশ্বব্যবস্থা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে থাকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা এখনো টিকে আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই এখনো সংশয় রয়ে গেছে।
সূত্র: রয়টার্স, দ্য ইকোনোমিস্ট