যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান পর্যটক আটকের সংখ্যা বাড়ছে

ভ্রমনে নতুন পরামর্শ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেসন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই চলতি বছরে চার জার্মান নাগরিককে আটক করেছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নতুন পরামর্শ দিয়েছে জার্মান সরকার। ফ্রান্স ও কানাডার কয়েকজন পর্যটকও অভিযোগ করেছেন, আমেরিকায় ঢোকার সময় তাদের আটক করা হয়েছে। খবর: ডয়চে ভেলে।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মার্তারা কিছুটা আক্রমনাত্মক বলে পরিচিত। তবে ইইউ দেশগুলোর নাগরিকরা এই কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া থেকে খানিকটা ছাড় পেতেন। ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথারাইজেশান বা বেড়ানোর বিশেষ সম্মতিপত্র বা পারমিট থাকলে তারা ৯০ দিন আমেরিকায় বেড়াতে পারেন। এরপরও জার্মান নাগরিকদের আটকের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হল। গত ১৭ মার্চ ফ্যাবিয়ান স্মিডটকে আটক করেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তারা। ফ্যাবিয়ান এবং তার মা অ্যাস্ট্রিড সিনিয়র পর্যটক নন। তারা গ্রিন কার্ড হোল্ডার। অর্থাৎ আইনত যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী। ২০০৭ সাল থেকে তারা আমেরিকায় থাকেন। বোস্টনের স্থানীয় মিডিয়াকে অ্যাস্ট্রিড বলেন, আমি অসহায় বোধ করছি। তিনি আরও জানান, ৩৪ বছরের ফ্যাবিয়ানকে জার্মানি থেকে আমেরিকায় ফেরার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা হয়। প্রায় কোনো জবাবদিহি ছাড়াই। কেবল বলা হয় গ্রিন কার্ড সম্পর্কে নতুন সতর্কতা জারি হয়েছে। অ্যাস্ট্রিড জানান, তার ছেলের খাওয়া হয়নি, ঘুম হয়নি, এমনকি পানিও খেতে পারেনি। তার উদ্বেগের ওষুধও খেতে দেওয়া হয়নি তাকে।

এ প্রশ্নে আইসিই হাসপাতালে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও আইনি ব্যবস্থা চলছে এটা জানিয়ে বাকি ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ফ্যাবিয়ানের আইনজীবী ডেভিড কেলার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আটক করার কোনো কারণ তাকে বা তার মক্কেলকে জানানো হয়নি।
আমেরিকার অভিবাসন আইনজীবী জন গিহন জানান, বিনা প্রশ্নে কাউকে আটক করার ক্ষেত্রে আইসিইর কোনো সময়সীমা নেই। তিনি বলেন, অতীতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কাগজপত্র পেশ করার নীতি থাকলেও সেই নিয়ম এখন কার্যকর নয়। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, বোস্টনের কনসাল জেনারেল বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এবং তাদের তরফ থেকে যে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব তা নেয়া হচ্ছে। আটক ব্যক্তি, তার বাড়ির লোক এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে চলতি মাসের শুরুতে পূর্ব জার্মানির বাট বিবরা শহরের বাসিন্দা ২৫ বছরের লুকাস শিলাফ ডের স্পিগেল পত্রিকাকে আমেরিকায় তার সঙ্গে ঘটা একইরকম কষ্টকর অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাকে দুই সপ্তাহ বন্দি রেখে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়। লুকাস জানান, নেভাদা-নিবাসী বাগদত্তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় তাকে আটক করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করেছেন। এবার আইসিই তাকে আটক করে। কোমরে শিকল দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১২৮ জনের সঙ্গে বন্দি রাখা হয়।

একইভাবে আইসিইর বন্দিশালায় আটক ছিলেন বার্লিনের ট্যাটু শিল্পী জেসিকা ব্র্যোশে। মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় প্রবেশের সময় তার ব্যাগে ট্যাটুর সরঞ্জাম পান অভিবাসন কর্তারা। এরপর তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ধরে নিয়ে বন্দি করা হয় এবং ছয় সপ্তাহ পরে তাকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়। একই অভিজ্ঞতা ২২ বছরের সেলিন ফ্লাডের। ডের স্পিগেলকে তিনি জানান, নিউইয়র্ক থেকে মায়ামিতে বেড়াতে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। বলা হয়, তার পাসপোর্টে গোলমাল রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বৈধ পাসপোর্ট ও পারমিট নিয়েই তিনি সফর করছিলেন। এই চার জার্মান পর্যটক এবং যুক্তরাষ্ট্র নিবাসীরাই নন, আরো অনেক পর্যটক আমেরিকার নতুন অভিবাসন অনুশাসনের জাঁতাকলে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করার আইন আনতে চেয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে তা খারিজ হয়ে যায়। জার্মানি ছাড়া ফ্রান্স বা কানাডার পর্যটকরাও একই অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকা ভ্রমণের একটি নতুন নির্দেশিকা বের করেছে। তাতে জানানো হয়, বৈধ ভিসা বা পারমিট থাকলেও জার্মান নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।