Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 2:00 am

যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। গত বছর থেকে টানা নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে তা এখন ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে। এ নিয়ে গত ১৪ মাসে ১০ বার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। খবর: বিবিসি।

সবশেষ গত বুধবার নীতি সুদহার বাড়ায় ফেড। তবে ফেড ইঙ্গিত দিয়েছে, আপাতত এখনকার মতো নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা থামল।

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভবিষ্যতে নীতি সুদহার আরও বৃদ্ধির কথা ফেডের চিন্তায় আছে, এমন কথা বলছি না। এ পরিস্থিতিকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি এমন কোনো কথা দেননি যে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না; সবকিছু নির্ভর করবে তথ্য-উপাত্তের ওপর।

২০২২ সালের মার্চে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। সেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ফেড নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। ১৪ মাসে ১০ বার নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণে সে দেশের নীতি সুদহার এখন ৫ থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের সীমায় উঠেছে।

নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার আরও বাড়বে। এতে অর্থের চাহিদা কমবে। নীতি সুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা গেলেও তার বিনিময়ে অর্থনীতির পালে হাওয়া কমে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে গত দুই মাসে যে তিন ব্যাংক ধসে গেল, তাতেও নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব আছে। দেশটিতে আবাসন খাতে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে, তাও এই বর্ধিত নীতি সুদহারের কারণে।

নীতি সুদহার বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু টুইটে বলেছেন, এ বিষয়ে কঠোর নিয়ম নেই, কিন্তু আমি মনে করি, ফেডের এ নীতি সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে বিপুল পরিমাণ বন্ড আছে, তাদের স্থিতিপত্রের অবনতি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে এটাই এখন বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি ধসে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) নগদ জোগানের ভারসাম্যের তোয়াক্কা না করে বন্ডে দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তখন নীতি সুদহার প্রায় শূন্য; কভিড মহামারি ছিল না, লকডাউন বা লাগাম ছাড়া মূল্যস্ফীতিও ছিল না। সমস্যার শুরু হলো লকডাউন-উত্তর ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে। এসভিবি ঠিক এ কারণেই বিপদে পড়ে; অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফেড নীতি সুদহার বাড়াতে থাকলে এসভিবির কেনা বন্ডের দাম কমতে থাকে। ফলে স্থিতিপত্রে তাদের মুনাফা কমতে থাকে। গত ৮ মার্চ ব্যাংকটি বন্ডে বিনিয়োগ বাবদ ১৮০ কোটি ডলার ক্ষতির কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এরপর আমানতকারীরা রাতারাতি তাদের জমা টাকা এই ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেয়া শুরু করে। এরপর ব্যাংকটির পতন ঘটে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বছরের প্রথম মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট নীতি সুদহার বাড়ায় ফেড। গত বছরের মার্চের পর নীতি সুদহার বৃদ্ধির হার এটাই সবচেয়ে কম ছিল। এরপর ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নীতি সুদহার বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেয়। পরে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে নীতি সুদ বাড়ায়।

এরপর গত মার্চে ফেড চেয়ার জেরোমে পাওয়েল বলেন, সুদের হার আবারও বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও শক্তিশালী চাকরির বাজারের জন্য প্রয়োজনে আবারও সুদহার বাড়ানো হবে।