শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি এবং একইসঙ্গে বেড়েছে ভোক্তা ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি। মজুরি বৃদ্ধির ফলে জানুয়ারিতে মার্কিন ভোক্তাব্যয় গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার দেশটির বাণিজ্য বিভাগ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন গ্রাষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম বা ফেড সুদহার বাড়াতে পারে। যদিও সম্প্রতি ফেড কয়েক দফা সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে সাধারণ নাগরিকদের ওপর মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। খবার: আল জাজিরা।
এর আগে কভিড মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে দেশটিতে মন্দার আশঙ্কা করেছিলেন অনেক অর্থনীতিবিদ। তবে ইউএস কমার্স ডিপার্টমেন্টের ওই প্রতিবেদন ইঙ্গিত করে, যুক্তরাষ্ট্র ‘মন্দার’ ধারে কাছেও ছিল না। বরং জানুয়ারির শক্তিশালী শ্রমবাজার ইঙ্গিত করে দেশটিতে অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারিতে শক্তিশালী চাকরির বাজার গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ বেকারত্বের হার দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে নর্থ ক্যারোলিনার এলপিএল ফিন্যান্সিয়াল শার্টলের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফ্রোই রোচ বলেন,‘স্পষ্টত ফেডের কঠোর মুদ্রানীতি যুক্তারাষ্ট্রের ভোক্তাদের পুরোপুরি প্রভাবিত করতে পারেনি। তিনি বলেন, সামগ্রিক চাহিদা কমাতে ফেডের আরও কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনের অর্থ হলো ফেড গ্রীষ্মে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে।’
প্রসঙ্গত, ভোক্তা ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থনীতিকে নির্দেশ করে। জানুয়ারিতে ভোক্তাব্যয় এক দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে দেশটিতে, যা ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। যদিও গত ডিসেম্বরে সংশোধিত তথ্যে এ ব্যয় শূন্য দশমিক দুই শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক এক শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস অনুয়ায়ী ভোক্তাব্যয় ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল, যা অতিক্রম করে ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারিতে ভোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার্য পণ্য, যেমনÑমোটরবাইক, গৃহস্থালির উপকরণ বেশি কিনেছে। এমনকি ভোক্তারা বাইরে খাওয়া ও বিনোদনেও বেশি ব্যয় করেছে।
কমার্স বিভাগের ওই প্রতিবেদন বলছে, ১৯৮১ সালের পর জানুয়ারিতে ৬৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় মজুরি ও বেতন শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে লিভিং কস্ট ৮ দশমিক ৯ শতাংশ সমতায় এসেছে, যা নাগরিকের আয় বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বছরের শুরুতে সিজনাল কর্মকাণ্ডের জন্য আয় বৃদ্ধি দেখা গেছে। আগামী মাসে তা আবার কমে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। তবুও ভোক্তাব্যয়ের শক্তিশালী পারফরম্যান্স বছরের প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে। যদিও বিদায়ী চতুর্থ প্রান্তিকে ভোক্তাব্যয় ধীরগতির ছিল।
তবে মুডি’স অ্যানালিস্টস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ‘মন্দা’ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ মাসে দেশটির পুঁজিবাজার ধীরগতিতে শুরু হয়েছে। বাস্কেটস মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে, কমেছে ট্রেজারি বন্ডের দাম।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মার্চ ও মে মাসে ফেড ২৫ বেসিস পয়েন্টে আরও দুটি অতিরিক্ত সুদহার বাড়াবে। যেখানে স্টক মার্কেটগুলো জুনে বাজারদর বৃদ্ধির বাজি ধরছে। গত মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যংক ৪৫০ বেসিস বাড়িয়ে সুদহার শূন্যের কাছাকাছি থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৭৫ রেঞ্জে বাড়িয়েছে। জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত খরচ সূচক শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এটি ২০২২ সালের জুনের পর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি।