নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য টানা বাড়ছে। তবে এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সিংহভাগই তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খনিজ পণ্য, জ্বালানি উপকরণ, বিটুমিন, আয়রন, স্টিল, ফল ও বীজ, তেলবীজ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তুলা, ওষুধ, শিল্প সরঞ্জাম ইত্যাদি আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক কম।
গত কয়েক বছরে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানির চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি দেশটিতে রপ্তানির ৩০ শতাংশেরও কম। যদিও গত পাঁচ বছরে ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে দেশটিতে রপ্তানিও বেড়েছে। তবে রপ্তানি বৃদ্ধির হার আমদানি বাড়ার হারের চেয়ে বেশি ছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪০ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে এ সময়ে বাংলাদেশ দেশটি থেকে আমদানি করেছে ১১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ বছরে রপ্তানির তুলনায় আমদানি ছিল ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছে এক দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়েছে চার দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশটিতে রপ্তানির মাত্র ২৭ শতাংশ আমদানির করেছে বাংলাদেশ। আর ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মধ্যে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্যই ছিল চার দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৯ শতাংশই এ-জাতীয় পণ্য থেকে আসে।
গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে এক দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। পরের অর্থবছর (২০১৮-১৯) আমদানি সামান্য বেড়ে হয় এক দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ আমদানি আরও বেড়ে দুই দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানি আরও বেড়ে হয় দুই দশমিক ২৬ বিলিয়ন হয়। সর্বশেষ গত অর্থবছর দেশটি থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
গত পাঁচ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে ফল ও বীজ, তেলবীজ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সুতা, ওষুধ ও পরমাণু উপকরণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১ কোটি ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৩৬ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছর ৪৪ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছর ৫৩ কোটি ডলার এবং গত অর্থবছর ৪৩ কোটি ডলারের এসব পণ্য আমদানি করা হয়।
এরপর আয়রন ও স্টিল আমদানি করা হয় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৪ কোটি ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৩০ কোটি ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছর ৩৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছর ৪৩ কোটি ডলার এবং গত অর্থবছর ৭২ কোটি ডলারের এসব পণ্য আমদানি করা হয়। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই কোটি ডলারের খনিজ পণ্য, জ্বালানি উপকরণ ও বিটুমিন আমদানি হয়েছে। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর এ ধরনের পণ্য একই পরিমাণ আমদানি করা হয়। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছর প৭াচ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছর ১৫ কোটি ডলার এবং গত অর্থবছর ৭৯ কোটি ডলারের এসব পণ্য আমদানি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করে। পরের অর্থবছর (২০১৮-১৯) ৩৬ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করা হয়। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর পাঁচ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছর ৩১ কোটি ডলার এবং গত অর্থবছর ২৯ কোটি ডলারের তুলা পণ্য আমদানি করা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রি-অ্যাক্টর, ব্রয়লার ও শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে দেশটি থেকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১৩ কোটি ডলারের এসব পণ্য আমদানি করে। পরের অর্থবছরও (২০১৮-১৯) একই পরিমাণ আমদানি করা হয়। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর ২৯ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছর ২৬ কোটি ডলার এবং গত অর্থবছর ১৩ কোটি ডলারের এসব পণ্য আমদানি করা হয়।
আমদানির বিপরীতে দেশটিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেশি করছে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য। প্রায় ৯০ শতাংশই রপ্তানি আয় আসে এ খাত থেকে। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য ও চিংড়ি, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, সবজি ইত্যাদিও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য থেকে।
পাঁচ বছরের রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়। পরের অর্থবছর (২০১৮-১৯) রপ্তানি আয় বেড়ে হয় ছয় দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় আবার বেড়ে হয় ছয় দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং গত (২০২১-২২) অর্থবছর দেশটিতে পণ্য রপ্তানি হয় ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।