শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা এটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি যে, এ ঘটনায় রাশিয়ার হাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। খবর : বিবিসি।
তবে মস্কো কীভাবে এই হামলা চালিয়েছে বা কেন তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলা হলো এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি পম্পেও। অন্যদিকে রাশিয়া এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি জানিয়েছে, এ ধরনের হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
গত সপ্তাহেই সাইবার হামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র-ব্যবস্থাপণার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থাও হামলার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি দপ্তর। দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এই প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সাইবার হামলা পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশটির জ্বালানি দপ্তর বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে, যুক্তরাজ্যসহ আরও কিছু দেশের বিভিন্ন সংস্থাও বলছে, একই ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার দিয়ে তারাও হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। গবেষকরা এই হ্যাকিংকে সানবার্স্ট বলে উল্লেখ করেছেন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ সাইবার হামলার কারণে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
শুক্রবার রেডিওতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইক পম্পেও বলেন, কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি কোম্পানিতে সাইবার হামলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আরও কিছু দেশের সরকারি ও অন্যান্য সংস্থায় রাশিয়া একই ধরনের হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। টেক্সাসভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সোলারওয়াইন্ডসের সফটওয়্যারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে হ্যাকাররা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে এসব বড় হামলার চেষ্টা চলেছে। তবে এসব হামলার কথা এতদিন প্রকাশ করা হয়নি। গত রোববার প্রথমবারের মতো ওই হামলার কথা স্বীকার করেন মার্কিন সরকারি কর্মকর্র্তারা। তবে বড় পরিসরের এই সাইবার হামলার বিষয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও কোনো মন্তব্য করেননি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাইবার নিরাপত্তাকে তার প্রশাসনের ‘সবচেয়ে অগ্রাধিকারের’ বিষয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মাইক পম্পেও বলেছেন, মার্কিন তদন্ত কর্মকর্তারা ওই হামলার বিষয়ে তদন্ত করছেন। খুব শিগগির এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেছেন এ শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
সোলারওয়াইন্ডসের সফটওয়্যারের আওতায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে হ্যাকাররা। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় কোনো ধরনের বিঘœ ঘটানো বা মারাত্মক প্রভাব ফেলার চেয়ে তারা হয়তো তথ্য চুরির দিকটিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এদিকে, কম্পিউটার নেওয়ার্ক টুল সোলারওয়াইন্ডস ওরিয়নের আগে জানিয়েছে, তাদের প্রায় তিন লাখ গ্রাহক সাইবার হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে গ্রাহক বা নাগরিকদের তথ্য সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরেই রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য চুরির চেষ্টা করছে বলে মস্কোর দিকে অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।