Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 12:59 am

যুক্তরাস্ট্রের নির্বাচনে পুঁজিবাজারের প্রভাব

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কাতারভিত্তিক আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে দেশটির পুঁজিবাজার এবং সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি। অন্তত কে জয়ী হবেন, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে পুঁজিবাজার। বিগত কয়েক বছরের পুঁজিবাজারের রেকর্ড দেখে ভোটের ফলাফল সম্পর্কে ধারণায় পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করছে গণমাধ্যমটি।
আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাই চোখ রাখুন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারের দিকে। তবে নির্বাচনে কে জিতবেন, তা একদম নিশ্চিত করে বলা এ অবস্থায় সম্ভব নয়। কেননা যেসব জরিপ করা হয়েছে সেগুলো যদি বিশ্বাসযোগ্য করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, কয়েক দশকের মধ্যে এবারই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হতে চলেছে।

প্রথমেই আসে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০টি বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন আর মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায় এই সূচকে। ১৯২৮ সাল থেকে তারা এ কাজটি করছে। এই সূচক বিশ্লেষণ করে গত ২৪টি নির্বাচনের মধ্যে ২০টির ফলাফল সম্পর্কে অগ্রিম ধারণা পাওয়া গেছে বলে বিশ্লেষণ করেছে আর্থিক সেবা কোম্পানি এলপিএল ফাইন্যান্সিয়াল। গত ১৫টি নির্বাচনের ১২টিতে দেখা গেছে, ভোটের দিনের তিন মাস আগে থেকে যদি পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকে, তাহলে হোয়াইট হাউস ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়।
অন্যদিকে, বাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করলে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে হারে। ৯টি নির্বাচনের মধ্যে আটটির ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা গেছে। পূর্বাভাস দেওয়ার যত মডেল আছে, সেগুলোর বিবেচনায় এটিকে খুব খারাপ বলা যায় না।

আর মাত্র এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় পর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আগস্টের শুরুর দিকের তুলনায় এখন পর্যন্ত এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। সুতরাং আগামী কয়েক দিনে যদি নাটকীয় কিছু না ঘটে এবং পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন না ঘটে, তাহলে ঐতিহাসিক এই ধারা কমলা হ্যারিসের পক্ষেই যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি কিন্তু রয়েছে। কমলা হ্যারিসের জন্য দুঃসংবাদ হলো, পুঁজিবাজারের জোরালো অবস্থানের সঙ্গে অর্থনীতি ভালো করার বিষয়কে ভোটাররা এক করে দেখছেন না বলে মনে করা হচ্ছে। নাগরিকদের প্রায় ৬১ শতাংশ কোনো না কোনো শেয়ারের মালিক বা তারা শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। তবে বিপুলসংখ্যক ভোটারের পুঁজিবাজারে সরাসরি কোনো অংশগ্রহণ নেই।

এ সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েট প্রেস–এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের করা এক জরিপে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ভোটারদের ৬২ শতাংশই মনে করেন, অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ‘খারাপ’। এই ভোটারদের একটি বড় অংশ রিপাবলিকান পার্টির কিংবা দলনিরপেক্ষ। তবে কমলা হ্যারিসের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হলো, ভোটাররা আস্থাশীল যে অর্থনীতির বিষয়গুলো তিনি ভালোভাবে সামলাতে পারবেন। এর মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, অর্থনীতির এ দিকটাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন, সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ ভোটাররা আর সাবেক প্রেসিডেন্টকে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্য ভাবছেন না।

নানা ধরনের সূচক, বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ও বেকারত্বের হার বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন ভালো করছে। অর্থনীতির পরিস্থিতি এতটাই ভালো যে এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোও তা দেখে ঈর্ষান্বিত হবে। তবে এত ভালোর মধ্যেও একধরনের অন্ধকারের ছায়া রয়েছে। এই নেতিবাচক মনোভাবের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে প্রায়ই চিহ্নিত করা হয় তা হলো, পণ্যের উচ্চমূল্যের বিষয়ে ভোক্তাদের বিরক্তি। যদিও গত মাসে মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। কভিড–১৯ মহামারিতে মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যে পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে, মূল্যস্ফীতি বর্তমানে তার কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে।