যুদ্ধে ইউক্রেন হারিয়েছে ২৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন হারিয়েছে দেশের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি। এই বিপুল জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকট প্রকট হবে দেশটিতে। খবর: এনডিটিভি।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শিল্পাঞ্চলগুলো কার্যত ধুলোয় মিশে গেছে। তার ওপর চাষযোগ্য জমি নষ্ট হওয়ায় ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। গত সোমবার দেশটির উপকৃষিমন্ত্রী তারাস ভিসতস্কি জানান, যুদ্ধের জেরে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ২৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, কৃষিজমি নষ্ট হলেও দেশে যথেষ্ট পরিমাণে শস্য উৎপাদন হচ্ছে। ফলে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কার কিছু নেই। এক সংবাদ সম্মেলনে তারাস ভিসতস্কি বলেন, ২৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি নষ্ট হলেও চলতি বছর যেভাবে চাষ করা হয়েছে, তাতে পর্যাপ্ত ফলন হবে। তাই ইউক্রেনে খাদ্যশস্যের কোনো অভাব হবে না।

ইউক্রেনকে ইউরোপের শস্যভাণ্ডার বলা হয়। উর্বর জমি ও চাষবাসের আধুনিক পদ্ধতির কারণে গম থেকে শুরু করে বিপুল পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে দেশটি। এসব শস্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ভালোই হয় কিয়েভের। কিন্তু যুদ্ধের পর পরিস্থিতি পালটে গেছে। মারিওপোলসহ ইউক্রেনের বন্দরগুলোয় আমদানির জন্য মজুত থাকা শস্য আটকে দিয়েছে রাশিয়া। এর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা জানায়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমি ২০২২ সালের মৌসুমে অনাবাদি বা চাষের আওতার বাইরে থেকে যাবে।

উল্লেখ্য, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখনও কিয়েভ দখল করতে পারেনি তারা। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র হারিয়ে গত এপ্রিলে সামরিক অভিযানের প্রথম পর্বে ইতি টানার কথা ঘোষণা করে রাশিয়া। পাশাপাশি মারিওপোল ও ডনবাস অঞ্চলে অভিযান তীব্র করে তোলে পুতিন বাহিনী। এখনও ডনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর। ইউক্রেন মস্কোর বেঁধে দেয়া শর্তাবলি মেনে নিলে সেদেশে এই বিশেষ সামরিক অভিযান বন্ধ করবে রাশিয়া। যুদ্ধ বন্ধ করার প্রধান শর্ত, ইউক্রেন যেন কোনোভাবে ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ না দেয়। তাছাড়া অধিকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে কিয়েভকে। পাশাপাশি রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে জেলেনস্কি সরকারকে।

তবে ইউক্রেন এসব শর্তের কোনোটি না মেনে অনড় অবস্থানে থাকায় যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং এই যুদ্ধ অস্থিরতা তৈরি করেছে বিশ্ববাজারে। বেশিরভাগ দেশে বেড়েছে সব পণ্যের দাম। যুদ্ধ পরিস্থিতি ও নিষেধাজ্ঞার ডামাডোলে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করতে না পারায় খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে কয়েকটি দেশে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে দেশে জীবনযাত্রার সংকট গভীর হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে উঠেছে। নিউজিল্যান্ডের মতো ধনী দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে এরই মধ্যে ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ প্রায় সব অঞ্চলেই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী।

ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত অঞ্চলগুলোয়ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এজন্য বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও সেই ক্ষোভ সহিংস রূপ নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।