Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 9:15 pm

যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হামিদুরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

রফিক মজিদ, শেরপুর: নিয়ম অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি থাকতে পারেন না। কিন্তু শেরপুর সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান টানা ১৩ বছর শেরপুর সদর কার্যালয়ে খুঁটি গেড়ে বসেছেন। তার সেই খুঁটির জোরে একের পর এক করে যাচ্ছেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এমনকি তার নিজের চাকরিটা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হলেও তার বাবা শহীদ হন একাত্তরে, কিন্তু তার জন্ম দেখানো হয়েছে ১৯৭৩ সালের ১৪ জানুয়ারি। এ নিয়ে তৎকালীন উপপরিচালক (উপসচিব) সেলিনা শাহাদত তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং জন্ম তারিখ নিয়ে গরমিল দেখতে পেয়ে তার বিরুদ্ধে মহাপরিচালক বরাবর বিভাগীয় তদন্তের জন্য অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। সেই অভিযোগ ও তদন্ত আজও আলোর মুখ দেখেনি বলে অফিস-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।

জানা গেছে, বর্তমান শেরপুর সদর উপজেলার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান ১৯৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিতর্কিত সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। তার বাবা একাত্তরে শহিদ হলেও তার এনআইডি কার্ডে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৭৩ সালের ১৪ জানুয়ারি। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামালপুর জেলা সদরে থাকার পর পরবর্তীতে শেরপুর জেলা সদরে বদলি হয়ে আসেন ২০১০ সালে। এরপর থেকেই তিনি শেরপুর সদরেই অদ্যাবধি কর্মরত। ইতোমধ্যে শেরপুর সদরের পাশাপাশি অতিরিক্ত দয়িত্বে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় দুই দফায় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল ও সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া তিনি এর আগে ২০১৮ সালে শ্রীবর্দীতেও কিছু দিন অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। শেরপুর সদর ও ঝিনাইগাতী উপজেলার দায়িত্বে থাকা দীর্ঘ এক যুগের অধিক সময়ে তিনি ভুয়া বিল ভাউচারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে সরকারি লাখ লাখ টাকা। 

তিনি জামালপুর জেলায় কর্মরত অবস্থায় তৎকালীন উপপরিচালক (উপসচিব) সেলিনা শাহাদত তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং তার জন্ম তারিখ গরমিল দেখতে পেয়ে তার বিরুদ্ধে মহাপরিচালক তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে এবং ঊর্ধ্বতন কতর্পক্ষের কাছে বিভাগীয় তদন্তের জন্য অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। কিন্তু তার কাছে চাওয়া ব্যাখ্যা এবং সেই অভিযোগ ও তদন্ত আজও আলোর মুখ দেখেনি বলে অফিস-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।

ঝিনাইগাতী অফিসের বিশেষ একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ঝিনাইগাতী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয় গত ২৫ আগস্ট। এ সময় তিনি তড়িঘড়ি করে অফিস বরাদ্দের প্রায় ৫৫ হাজার টাকার একটি বিল ২৮ আগস্ট উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন। এরপর তিনি ওই বিল ৩০ আগস্ট উত্তোলন করে ভুয়া বিল ভাউচার করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে যুব প্রশিক্ষণের কোনো ব্যানার তৈরি না করে এবং প্রশিক্ষণের বিভিন্ন খরচ না করেই ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।

তিনি ঝিনাইগাতীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা অবস্থায় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ দিনের বেশি অফিস না করলেও তার ব্যবহƒত সরকারি মোটরসাইকেলের জন্য প্রতি মাসে ৩৬ লিটার করে বাড়তি তেল উত্তোলন করে ওই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। একইভাবে তিনি শেরপুর সদর উপজেলা অফিস থেকেও ওই তেলের টাকা উত্তোলন করে আসছেন।

ঝিনাইগাতী অফিস থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশিক্ষিত একজন যুব জানায়, আগের কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের সময়কালে একটি প্রশিক্ষণে তাকে ট্রেইনার হিসেবে নিয়ে এসে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেন। অথচ ওই প্রশিক্ষণে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার টাকা ভ্যাট কেটে ৪ হাজার ৫শ টাকা। 

এদিকে অফিস-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তৎকালের ন্যাশনাল সার্ভিসের লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভুয়া আইডি কার্ড দেখিয়ে শতাধিক যুবকের চাকরি দেয়া হয়। এ সময় লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে হামিদুরের বিরুদ্ধে। সে সময় এ টাকা আত্মসাতের বিষয় নিয়ে অফিসে গোলযোগ হলে তৎকালে জেলা প্রশাসকের এডিসিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি ন্যাশনাল সার্ভিস লোক নিয়োগ কমিটিকেই দায়ী করা হয় এবং শতাধিক ভুয়া নিয়োগ বাতিল করা হয়। ওই নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন এ হামিদুর রহমান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির বিষয় শতভাগ সত্য, কিন্তু জন্মসনদে আমার বয়স কম দেখানো হয়েছিল। এছাড়া আমি ভালো পারর্ফম করায় সরকার আমাকে এখানে রেখেছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সব বিল-ভাউচার ও প্রশিক্ষণের ভাতা আমি উত্তোলন করিনি, করেছে অফিস সহকারী আব্দুর রউফ। শ্রীবর্দী উপজেলায় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ন্যাশনাল সার্ভিসের লোক নিয়োগের টাকা আমি নিইনি, নিয়েছিলেন তৎকালীন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জেলা যুব উন্নয়ন বিভাগের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান সদর উপজেলা ওই কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।