যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন শাজাহানপুরে জোড়া খুনের শ্যুটার মাসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও এক কলেজছাত্রীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৪) নামের এক শ্যুটারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে বগুড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার।

কিলার মাসুম মাসুম একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কাইশকানি এলাকায়। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। মাসুমের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৪ থেকে ৫টি মামলা রয়েছে।

যেভাবে গ্রেপ্তার হল মাসুম:

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার জানান, ঘটনার ৫ দিন আগে টিপুকে হত্যা করার জন্য মাসুমকে কিলিং মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এটির কোন টাকার চুক্তি ছিল না। মাসুমের বিরুদ্ধে ৪-৫টি মামলা রয়েছে। একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। সেই মামলা থেকে সুবিধা আদায় করে দেয়া হবে প্রলোভনে তাকে এই কাট-আউট পদ্ধতিতে হত্যার কন্ট্রাক দেয়া হয়।

হাফিজ আক্তার জানান, চুক্তির দ্বিতীয় দিন টিপুকে হত্যার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে শাহজাহানপুরে অপেক্ষা করে মাসুম। কিন্তু সেদিন হত্যার সুযোগ পায় না সে। পরের দিন বৃহস্পতিবার মাসুম জানতে পারে মতিঝিল এজিবি কলোনি সংলগ্ন কাঁচা বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা টিপুর রেস্টুরেন্টে আছে। এরপর মাসুম সেখানে এসে অপেক্ষা করতে থাকে আর গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে তার গাড়ি অনুসরণ করতে থাকে মাসুম। গাড়িটি শাজাহানপুর লাইনের আগে আমতলা রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে মাসুম টিপুকে লক্ষ্য করে উপর্যপুরি গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় তার সঙ্গে দুই বন্ধু ছিল বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে মাসুম।

ডিবি প্রধান জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই নিজস্ব প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা। তারই অংশ হিসেবে তথ্য আসে মাসুম ঘটনার পরপরই একটি বাসে করে জয়পুরহাটের দিকে চলে গেছে। পরে জয়পুরহাট সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি জয়পুরহাট ও বগুড়ার আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকে। তারই অংশ হিসেবে বগুড়া জেলা পুলিশের সহযোগিতায় শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে বগুড়া জেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাসুম বগুড়ায় অবস্থান করে জয়পুরহাট সীমান্ত দিয়ে সুবিধাজনক সময়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেও জানান হাফিজ আক্তার। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও ছিল তার।

এটি কি কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড? সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আপাতত আমরা তিন থেকে চারটি মোটিভ নিয়ে কাজ করছি। তবে এখন শুধুমাত্র তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।

কলেজছাত্রী সমিয়া আফরান প্রীতিকে তাহলে কেন হত্যা করা হলো, এ বিষয়ে মাসুম কি কিছু বলেছে কিনা- এমন প্রশ্নে হাফিজ আক্তার বলেন, মাসুম জানিয়েছে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দেওয়া ছিল। যে কয়টা গুলি ছিল তার সবই বের হয়ে যায়। মূলত এ কারণেই প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। কিন্তু প্রীতিকে হত্যা করার কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না। শুধু তাই নয়, তার গুলিতে প্রীতি নামের এক কলেজছাত্রী মারা গেছে, সেটিও জানতো না মাসুম। ঘটনার পরের দিন টিভিতে সেটি জানতে পারে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে মাসুম।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে শাহজাহানপুর রেলগেটের পাশে জ্যামে আটকে থাকা প্রাইভেটকারে মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে এক দুর্বৃত্ত। এতে টিপু ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পাশে রিকশায় বসে থাকা বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতির গায়েও গুলি লাগে। পরবর্তী সময়ে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গাড়িচালক মুন্না চিকিৎসাধীন।

পরে শাজাহানপুর থানায় জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ড নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি হত্যা মামলা দায়ের করেন।